স্বপ্নের ইতি টানা স্বাধীনের দাফন সম্পন্ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ইতি ঘটনানো আগেই চলে যেতে হলো ফিরোজ কবীর স্বাধীনকে। সাজানো স্বপ্ন পূরণ করে পরিবারের কষ্ট লাগবে হাত দেয়ার আগেই থেমে গেল জীবনের চাকা। আজ শনিবার বাদে আসরের পর ঠাকুরগাঁও জেলায় নিজ এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হন।
ফিরোজের বড় ভাই মো. ফজলুল করীম রাতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আসরের নামাযের পরে ভাইয়ের দাফন পারিবারিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে স্বাধীনের গায়েবানা জানাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির কয়েকশ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
গায়েবানা জানাজায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম উপস্থিত থেকে বলেন, স্বাধীনের মৃত্যু কখনই কাম্য নয়। আমরা স্বাধীনের মৃত্যুতে শোকাহত। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুক আর তার পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিক।
শুক্রবার রাতে স্বাধীনের মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে এমন সংবাদে অনেকে শেষ বারের মতে দেখার অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু তার মরদেহ ক্যাম্পাসে আনা হয়নি। ফলে তার সহপাঠিরা এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। ঢাবি শিক্ষার্থী আব্দুল গফফার জানান, বন্ধুদের দাবি সত্ত্বেও হল প্রশাসন ও হল সংসদের আপত্তির কারণে লাশ ক্যাম্পাসে আনা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাধীন এর পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্বাধীন খুব ভদ্র এবং ভালো ছাত্র ছিলেন। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘ ইউনিটে নবম হয় ২০১৩-২০১৪ সেশনের ভর্তি হন ফিন্যান্স বিভাগে।
ভর্তি হওয়ার পর পরই স্বাধীন পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিলেন। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে বাড়ি থেকে টাকা দিতে না পারায় ফ্রিল্যান্সিং ও অ্যাসাইনমেন্ট করে নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই চালাতেন। খুব বেশি সমস্যা না হলে পরিবারের সদস্যদের কাছে হাত পাততেন না।
জানা যায়, সংসারে চার ভাইবোনের মধ্যে স্বাধীন দ্বিতীয়। বড় ভাই শরিফ একজন কৃষক। কৃষি কাজ করেই তিনি সংসার চালান। স্বাধীনের বৃদ্ধ মা অসুস্থ। বয়সের ভারে বাবা তেমন কিছু করেন না। বড় ভাইয়ের উপার্জনে তাদের সংসার চলে। অন্যদিকে ছোট ভাই স্বাধীন নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালান।
এই স্বাধীনকে কেন্দ্র করে তার পরিবার স্বপ্ন দেখতো, এই স্বাধীন পড়াশোনা শেষ করে সংসারের হাল ধরবে। তাদের অভাবের সংসার সুখের মুখ দেখবে। কিন্তু সেই সুখের মুখ দেখা হলো না স্বাধীনের পরিবারের। এমনটি জানিয়েছেন স্বাধীনের স্বজনরা ।
স্বাধীনের বিষয়ে তার বন্ধু হাফিজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, স্বাধীন খুবই ভদ্র ও ভালো একজন ছাত্র ছিল। সে অ্যাসাইনমেন্ট ও ফ্রিল্যান্সিং করে পড়াশোনা করত। তার পরিবার ব্যবস্থা খুবই অসচ্ছল। আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, সে খুবই পরিশ্রমি ছিল।
তার বড় ভাই শরিফের কাছে স্বাধীন এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শুধু একটি কথাই বলেন, আমার ভাই, আমার ভাই। আমার স্বপ্ন আজ শেষ হয়ে গেল। কান্নার জন্য তিনি আর কিছু বলতে পারেনি।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই দিকে তার হঠাৎ করে ১০৫ ডিগ্রি জ্বর হয়। ১৯ তারিখ তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়য়ে যান তার রুমমেটরা। মেডিকেলে তার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। সেদিন রাতেই তার পরিবার তাকে দিনাজপুর ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে কয়েকদিন রাখার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আ হয়। ঢাকা মেডিকেলে কয়েকদিন রাখার পর অবস্থার আরো অবনতি হলে তার পরিবার তাকে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করায়। সেখানে শুক্রবার রাত দশটার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।