২৭ জুলাই ২০১৯, ১৬:৩৮

ঢাবিতে জেঁকে বসেছে ডেঙ্গু, আক্রান্ত ৭৩ শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। শুক্রবার ডেঙ্গুতে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুসহ ইতোমধ্যে প্রায় ৭৩ জন ছাত্র-ছাত্রী আক্রান্ত হয়েছেন। দিন দিন এই অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও তাতে সাড়া নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। বিষয়টি নিয়ে নানামুখী উদ্যোগ হাতে নেয়ার কথা জানালেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— হল প্রশাসনের পক্ষ তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, মশা জন্ম নিতে পারে, হলগুলোর এমন স্থানও ‍নিয়মিত পরিষ্কার করছেন না কর্মচারীরা। তবে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কাজটি গতকাল শুরু করেছেন তারা।

এদিকে আজ শনিবার বিকাল ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের হলে মোট ৭৩ জন ছাত্র-ছাত্রী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ছেলেদের ১২টি হলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬ জন। আর মেয়েদের তিনটি হলে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপ ‘স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’র চাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই চিত্র উঠে এসেছে।

ছেলেদের হলে  আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে— এফএইচ হলের ১০১৭ নং রুমে ৫জন, ১০১৫ নং রুমে ৫জন। শহীদুল্লাহ হলের ১১০২ নং রুমে ৩জন। একুশে হলের ৫০৩ নং রুমে (সালাম) ১জন। সূর্যসেন হলের ১৭৯ নং রুমে (লাদেন গুহা) ৭জন, ২২৬ নং রুমে ২জন এবং ২৩০, ২৩৪ রুমে আরও ২জন। জসীমউদদীন হলের ৫৩১ নং রুমে ২জন ও ১১৩ নং রুমে ১ জন। বঙ্গবন্ধু হলের ১১৩ নং রুমে ৯জন এবং  ৪২০ নং রুমে ১জন। জিয়া হলের ৪২২ নং রুমে ১জন ও ২২৫, ২২৬, ২২৭ নং রুমে মোট ৬জন এবং ৪২২ নং রুমে আরও ১জন। এসএম হলের বারান্দায় থাকাদের মধ্যে ৫জন (আরো অনেকেই আক্রান্ত)। জহুরুল হলের ৬ নং রুমে ৪জন এবং ১০১৩ নং রুমে ২জন। জগন্নাথ হলের ২৪৯ ও ৪৪৮ নং রুমে ২জন এবং ২০০৪ নং রুমে ১জন। মুহসীন হলের ৩৫২ নং রুমে ১জন। এফআর হলের ৫২২ নং রুমে ১জন। বিজয় ৭১ হলের পদ্মা ব্লক ৭০০৩ নং রুমে ১জন, ৬০০৬ নং রুমে ১জন, ৬০১২ নং রুমে ১জন, ২০০৭ নং রুমে ১জন, ৯০০৬ নং রুমে ১জন। আর যমুনা ব্লকের ৩০১০ নং রুমে ১জন, ৬০০৯ নং রুমে ১জন।

এছাড়া মেয়েদের ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ৫২১ নং রুমে ১জন। শামসুন নাহার হলের ১০০২ নং রুমে ১ জন, ১০০৬ নং রুমে ১ জন। সুফিয়া কামাল হলের ৮০৫ নং রুমে ১জন, ৮০৪ নং রুমে ১ জন, ৮০৬ রুমে ১ জন, ৮০২ নং রুমে ১ জন ডেঙ্গ রোগে আক্রান্ত। পুরো ক্যাম্পাসে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে ডেঙ্গু জ্বর।

বিভিন্ন হলে খবর নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। হলের বিরূপ পরিবেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে, প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী যারা গণরুমে থাকেন তারাই বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান মুত্তাকী বলেন, ‘প্রতিদিনই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে আসছেন। আমাদের মেডিকেলের ওয়ার্ডে আসলেই দেখবেন কি হারে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছেন।’ এ বছর কতজন শিক্ষার্থী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে জানতে চাইলে ঢাবি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার জানান, ‘আমাদের কাছে এর নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে প্রতিদিন ৫-৬ জন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন সেখানে।’

এদিকে হলে হলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়লেও মশক নিধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শরিফুল ইসলাম নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গণরুমে আমাদের কয়েকজন বন্ধু ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে মেডিকেলে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।’

সাজ্জাদ হোসেন নামে সূর্যসেন হলের এক শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে মাঝে মাঝে ধোঁয়া দেয়া হলেও মশা মরে না। কিন্তু সপ্তাহ খানিক ধরে সেটাও দেয়া হচ্ছে না। তিনি মশা মারার কার্যকরী ওষুধ দেয়ার জন্য জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

এছাড়া প্রায় সব হলেই কেউ না কেউ আক্রান্ত রয়েছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অনেক শিক্ষার্থীই বাড়ি চলে গেছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধিকাংশ গণরুমে মশারি টানানোর ব্যবস্থা নেই। ফলে দুঃসহ জীবন-যাপন করছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে হল প্রশাসনগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ছাত্র-ছাত্রীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন— এ ভয়াবহ অবস্থায় প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হলেও, হল প্রভোস্টদের কার্যকর ব্যবস্থা নেই বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। শুক্রবার রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা প্রতিটি হলের প্রশাসনের সাথে ডেঙ্গু নিধনে ওষুধ ছিটানোর ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে স্যাঁতসেঁতে এলাকা ও পানি জমে আছে ওইসব এলাকায় ওষুধ ছিটানোর ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবাই যেন স্বাস্থ্য সচেতন থাকে। মশার বিষয়ে যেন সবাই নিরাপদ থাকে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে যেন সুস্থ রাখে।