২৭ জুলাই ২০১৯, ০১:৫২

প্রিয় প্রশাসন, আমরা তো জীবন হাতে নিয়ে ঘুমোতে যাই

রাকিবুল ইসলাম ও গণরুম

শুক্রবার। ডেঙ্গু আক্রান্ত ফিরোজ কবির স্বাধীনের চলে যাওয়ার দিন। ঘড়ির কাঁটা তখনও রাত দুটোয় পৌঁছায়নি। তবে ছুঁইছুই। ফেসবুকে টাইমলাইনে হঠাৎ করেই কয়েকটা লাইন ভেসে উঠলো। যাতে লাইক দিব, না-কি কমেন্ট করব; কমেন্ট করলে কী লিখব— বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কৌতূহল বাড়িয়ে লাভ নেই, স্ট্যাটাসটাই শেয়ার করি।

স্ট্যাটাসদাতা রাকিবুল ইসলাম (আত্মপ্রেমিক)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ফেসবুক গ্রুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে রাকিব লিখেছেন— ‘‘আমরা গণরুমবাসীরা তো মশারিও টানাতে পারিনা! আমরাও তো কারো না কারো কলিজার টুকরা সন্তান। আমাদের জীবনের কি কোন দাম নেই? প্রিয় ঢাবি প্রশাসন, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। নয়তো ক্যাম্পাস ছুটি দিন।’’

স্ট্যাটাসে খানিকটা নয়, একটু বেশিই বিদ্ধ হলাম। সত্যিই বলতে কী, গণমাধ্যম গণরুমকে এতটাই প্রচার দিয়েছে যে, এখন আর তাঁদের কষ্টের গান গায়ে লাগে না। কিন্তু সেই গণরুমেই ‘মশারি টাঙাতে না পারা’ মত ছোট্ট ব্যাপারটি যে এভাবে বিদ্ধ করবে— সেটা হয়তো কল্পনাতেও আসেনি। বন্ধু থেকে কলিগ, আমলা থেকে মেয়র এমনকি রাজনীতিবিদরাও যখন ‘মশারি ছাড়া না ঘুমোনো’র ডাক্তারি শেখাচ্ছেন; তখন চেয়েও মশারি টানাতে না পারার বিষয়টি তো বিদ্ধ করবেই। আমাদের মতো কষ্ট পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের, গণরুম তুলে দেয়ার। কিন্তু যুগ যুগ ধরে ধরে চলে আসা গণরুমের খবরদারিত্ব চাইলেই কী বন্ধ করা যায়!

যাই হোক ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গেয়ে লাভ নেই। স্ট্যাটাস দেখে অপরিচিত রাকিবকে ফেসবুকেই নক করলাম। রিপ্লেও পেলাম। ওভার ফোনে কথা বলতে চাইলাম। রাজি হলো রাকিব। কথা হলো। ফোনালাপে এবার শুধু বিদ্ধই হলাম না, রীতিমত থমকেও গেলাম। গলাটা ধরে এলো। কষ্ট করে সর্বসাকুল্যে কথা বলতে পারলাম ৪ মিনিট ১০ সেকেন্ড। ৪ মিনিটের আলাপে রাকিব তো একবার বলেই ফেললেন, ‘ভাই, আমরা তো জীবন হাতে নিয়ে প্রতিরাতে ঘুমোতে যাচ্ছি। বলতে গেলে ‘টোটালি ডিপেনডেন্ট অন আল্লাহ’। উনি যদি ভালো রাখেন তো রাখবেন, না হলে এভাবেই চলে যেতে হবে।’

রাকিব আরো জানান, তারা ১১৩ নম্বর রুমে ৮ জনের জায়গায় ৩৫ জন থাকেন। এই মুহুর্তে আছেন ২৭ জন। এই ২৭ জনের ৩-৪ জন ইতোমধ্যেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। দু’জন বাড়ি চলে গেছেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্য একজন। রাকিব নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন, পুরোপুরি না হলেও আপাতত কিছুটা সুস্থ। 

তার ভাষ্য, সমস্যা যে শুধু তার রুমে, তা নয়। এই হলে আরো কয়েকটি গণরুম আছে। তাদেরও মশারি টানানোর সুযোগ নেই। এর মধ্যে ১০৩, ১০৮, ১১০, ১১৪ নাম্বার রুমেও অনেক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকছেন। যাদের মশারি টানানো তো দূরের কথা, কয়েল জ্বালানোর উপায়ও থাকে না।

রাকিব বলেন, ‘শ্বাস কষ্ট থাকার কারণে অনেকেই কয়েলের ধোঁয়া সহ্য করতে পারেন না। তাই মাঝে মাঝে সন্ধ্যার আগে কয়েল জ্বালালেও রাত আসার আগেও বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু নিচ তলার মশা, চাইলেও কি মশারি ছাড়া তাড়ানো যায়— পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন রাকিব।