র‌্যাংকিং সাহেবের মুখ ফসকানো ব্যর্থ চুম্বন

  © সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগীয় প্যারিস মডেল অনুসরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদি মডেলগুলোর একটা। শিক্ষার্থীরা এখানে হলে ভর্তি হয়, হলের ছাত্র থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পরীক্ষা নেয়। মধ্যযুগে শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হতো, কলেজেই লেখাপড়া করতো।

বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পরীক্ষা নিতো এবং ডিগ্রি দিতো। সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভূক্ত হবার অর্থ এই নয় যে বিশ্ববিদ্যালয়কে ঐ সব কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে হবে, কিংবা কলেজে অন্য সব দাপ্তরিক কাজের ভার নিতে হবে। সব কলেজই করতে পারে আগের মতো, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সনদ দিতে পারে। সনদে অবশ্যই কলেজের নাম লেখা থাকবে।

সবই হতে পারে, কিন্তু কিছুই হতে পারে না, কারণ এর সঙ্গে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ধান্ধা জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক কলেজের পরীক্ষার প্রশ্ন করতে চান কিংবা কলেজের পরীক্ষার খাতা কাটতে চান, কারণ এতে টুপাইস আছে। কলেজের বিভিন্ন কমিটিতে, মিটিঙে সরিক হতে চান তাঁরা, কারণ তাতেও টুপাইস আছে। টংকাহি কেবলম্।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বুয়াগিরি করেন, স্কুলেও অনেকে করেন, অনেকে নাকি শুক্রবারে মসজিদে খোৎবাও পাঠ করেন। কোথাকার ছাত্র - এই প্রশ্নের উপর টিউশনির রেট নির্ভর করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা ছাত্রের যে রেট, ঢাকা কলেজের ছাত্রের নাকি সেই রেট নয়। রেট বাড়াতে অনেকে মিথ্যাও বলে, যার প্রতিফলন হয় স্কুলের সামনে ফুটপাথে নিনজা ভাবীদের নাই দুনিয়ার বাহুল্য প্যাচালে: 'জানেন ভাবি, আমার বাচ্চাকে যে পড়ায় সে বুয়েটে ইংলিশে অনার্স পড়ে। কার্জন হলে থাকে!'

‘কলেজগুলোতে লেখাপড়া কিসসু হয় না!’ মনে করেন অনেকে। তাই যদি সত্য হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডেপুটেশনে কলেজে পড়াতে পাঠালে সমস্যা কী? যাও, ছয় মাস গিয়ে পড়িয়ে আসো তিতুমীর কিংবা ঢাকা কলেজে। বেতনভাতা একই থাকবে, বাসাও ছাড়তে হবে না, ঢাকার বাইরেও যেতে হবে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারলে কলেজে নয় কেন? সেক্ষেত্রে কলেজগুলোর পড়ানোর মান উন্নত হবে। কলেজের শিক্ষার্থীরাও এই ভেবে আশ্বস্ত হবে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয় মানের শিক্ষা পাচ্ছে, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেরই কোনো ‘মান’ (উভয়ার্থে) নেই।

শিশির ভট্টাচার্য্য  এর ফেসুবক থেকে নেয়া।


সর্বশেষ সংবাদ