২৫ জুলাই ২০১৯, ১৭:০৯

‘পিসফুল ডিভোর্স’ নয়, সমস্যার সমাধান চাই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার ছিল প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী সাত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়ন করার জন্য সাত কলেজকে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাবির অধিভুক্ত করে দেয়। আর সাত কলেজকে অধিভুক্ত করার জন্য দফায় দফায় মিটিং হয় ঢাবির তৎকালীন ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যারসহ কতিপয় শিক্ষাবিদের সাথে। তখন তৎকালীন ভিসি স্যার তো বলেনি সাত কলেজকে পরিচালনা করার ক্ষমতা ঢাবির নেই।

আর অধিভুক্ত হওয়ার কিছুদিন পর তো আসল তথ্য বেরিয়ে আসে যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হারুন অর রশিদ স্যারের সাথে ঢাবির তৎকালীন ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল। আর সে কারণেই তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে এবং ঢাবির তৎকালীন ভিসি তার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাছিল করার জন্যই কোন রকম চিন্তা ভাবনা ছাড়া সাত কলেজকে অধিভুক্ত করে নেয়।

এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হারায় তাদের দেশ সেরা সাতটি কলেজ। সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত হয়ে গেলো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমন গতিশীল হয় যে তারা আমাদের সেশনসহ সকল পরীক্ষাগুলো নিদির্ষ্ট সময় নিতে শুরু করে এবং সেই সাথে আমাদের থেকে এক বছর এগিয়ে যায়। তার সাথে তাদের সেশনজট হ্রাস, কোন সেশনজট নেই, আর ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য আন্দোলন করতে হয়, রেজাল্টের জন্য আন্দোলন করতে হয়। আর সেই আন্দোলনে আমাদের ভাই চোখ হারায়।  ঢাবির কালনাগিনীর ছোবলে আত্মহত্যা করে আমার বোন, আমরা ঢাবির অধীনে গিয়ে কি সুবিধা ভোগ করলাম?

সুবিধা তো পেলাম না সেই সাথে দেড় বছরের সেশনজটে আছি। যা আমাদের জন্য কাম্য নয়, সাত কলেজে থেকে  চাকরি বাজারে পিছিয়ে পড়েছি। সেই ক্ষতিপূরণ কে দিবে? ঢাবির শিক্ষকগণ, আমার মনে হয় তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ দিবে না।

এছাড়া বর্তমানে ঢাবির প্রশাসন সাত কলেজকে পরিচালনা করতে হিমসিম খাচ্ছে। তাদের শিক্ষার্থীরা সাত কলেজ মুক্ত সাত কলেজ চায়। এবার কাজের কথায় আসি, আমরা তো বলিনি সাত কলেজকে ঢাবির সাথে অধিভুক্ত করতে। আমাদের যে দীর্ঘ দেড়-দুই বছর যে সেশনজটে পড়েছি তার দায় দায়িত্ব কে নিবে এবং চাকরির বাজারে যে পিছিয়ে পড়েছি সেটার দায়িত্ব কে নিবে, আমরা বাঙালীরা কিন্তু মজিব আদর্শে বিশ্বাসী। তাই মনে রাখবেন, সিদ্ধান্ত যেন সুফল বয়ে আনে আর যদি এর ব্যতিক্রম হয় আর সাত কলেজ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে ঢাবি তার সেই ভুল সিদ্ধান্তের দাঁত ভাঙ্গা জবাব পাবে। আমরা চাই, অধিভুক্ত রেখে আমাদের সমস্যাসমূহ সমাধান করুন।

১. সাত কলেজের জন্য একটা প্রশাসনিক ভবন দরকার যেখান থেকে সাত কলেজ পরিচালনা করা হবে। প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে সময় প্রয়োজন, আপাতত একটি ভবন ভাড়া করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হোক।

২. প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, খাতা মূল্যায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম সাত কলেজের শিক্ষকগণ পরিচালনা করবে।

৩. ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।

৪. ঢাবি শুধু সনদপত্র প্রদান করবে, কারণ কোন কলেজ সনদপত্র প্রদান করতে পারে না। 

৫. সাত কলেজের সমাবর্তন এক সঙ্গে হবে। ঢাবি ছাড়া যেকোন একটি স্থানে।

৬. সেশনজট কামানোর জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু এবং সেই সাথে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করে করে সময় মতো পরীক্ষাগুলো নেওয়া।

আশা করি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করবেন, কোন পিসফুল ডিভোর্সের চিন্তা মাথায় আনবেন না। আর যদি অধিভুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে দুই লক্ষ শিক্ষার্থী কিন্তু তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত।

লেখক: আহবায়ক 
ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ ছাত্র ঐক্য পরিষ