প্রশাসন-ডাকসুতে অনাস্থা, আন্দোলন কালও
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হলেও তার সুফল পায়নি শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্যে ডাকসু নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করলেও দীর্ঘ ২৮ বছরে হারিয়ে গেছে সেই ভূমিকা। ডাকসু কার্যকর হওয়ার পর ঢাবিতে গড়ে উঠা প্রথম ব্যাপক আন্দোলন "অধিভুক্তি বাতিল আন্দোলনে' ডাকসুর কার্যকর ভূমিকা চেয়েও পায়নি আন্দোলনকারীরা। ফলে তারা ডাকসুর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর আস্থা না রেখে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ব্যপারে অটল।
সম্প্রীতি সময়ে ঢাবিতে গড়ে উঠা রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্ত বাতিলের দাবিতে ডাকসুর কার্যকর ভূমিকা চেয়ে নেতাদের কাছে স্মারকলিপি দেয় আন্দোলনকারীরা।
গত ২৪ এপ্রিল আন্দোলনের মুখপাত্র মো. শাকীল মিয়া, অন্যতম সমন্বয়ক আশিকসহ আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল ডাকসুতে ভিপি নুরুল হক নুর, এজিএস সাদ্দাম হোসেনের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন। ঐদিন ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীকে পাইনি তারা। এরপর বিভিন্নভাবে জিএসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার নাগাল না পাওয়ার দাবি তাদের।
ডাকসু কার্যকর হওয়ার চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও ডাকসুতে এখনও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কোন আলোচনা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভিপি নুরুল হক নুর। তার দাবি, বারবার চেষ্টা করা হলেও এখন পর্যন্ত ডাকসুর সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ছাড়া ডাকসুর সদস্যরা নিজেরা কখনও বসতে পারেননি। বরং বিভিন্ন ইস্যুতে বাকি সবার মতামত জিএস গোলাম রব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন দিয়ে দেন বলে অভিযোগ তার।
অধিভুক্ত সাত কলেজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলার জন্য ডাকসুকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গত রোববার আন্দোলনের মুখে ঢাবি প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সামাদ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ডাকসু নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন। সেখানে ডাকসু নেতাদের সামনে সাত কলেজ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিষয়টি নিয়ে পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাত কলেজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যায় আমরা বৈঠক করেছি সেখানে ডাকসু নেতারাও ছিল। তাদের সামনে সব বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন ডাকসু নেতারা নিজেদের বৈঠক করবেন। এরপর আন্দোলনকারীদের সাথে বসে তাদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিবেন।
প্রশাসন থেকে ডাকসুকে দায়িত্ব দেয়া হলেও সেদিন ডাকসু নেতারা বসেনি বলে জানালেন ভিপি। আন্দোলনকারীদের সাথেও ডাকসু থেকে কোনরূপ যোগাযোগ করা হয়নি। বরং একটা প্রেস রিলজ দিয়ে আন্দোলনকারীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে মতামত দেন নেতারা।
ডাকসু ভিপি বলেন, প্রশাসন চায়না ডাকসু কার্যকর হোক এখন পর্যন্ত ডাকসুতে যত কাজ হয়েছে সব ব্যক্তি উদ্যোগে করা হয়েছে। বরং ছাত্রলীগ নেতারা চায় ডাকসুকে ছাত্রলীগের একটা অঙ্গসংগঠনে পরিণত করতে। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের হামলা করা হলো। ডাকসু থাকতে ছাত্রলীগ কেন এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিবে।
ডাকসু ব্যর্থ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৮ বছর আগের ডাকসু আর এখনকার ডাকসু এক নয়। এখন যারা ডাকসু নেতা হয়েছেন, এখানে ভোট কারচুপিরও একটা অভিযোগ আছে। তাই এখনকার যারা ডাকসু নেতা তারা সাধারণ ছাত্রদের মেন্ডেট নিয়ে নির্বাচিত না।
ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে এটি আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা। ডাকসুর ব্যর্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতির ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে। যেহেতু একটা আন্দোলনের শুরু হলে ক্লাসে ফেরার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ডাকসু সফল কি ব্যর্থ এটি নির্ভর করবে শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনে কি ভূমিকা রাখছে সেটি। এটির জন্য কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। ৭কলেজ সংকটের যদি আমরা সমাধান করতে পারি তাহলে আমরা বুঝব ডাকসু সফলতার পরিচয় দিয়েছে।
সাত কলেজ আন্দোলনের সাথে শুরু থেকে সমর্থন দেয়া ডাকসুর ডাকসুর সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ডাকসু সফল বা ব্যর্থ হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে শিক্ষার্থীদের ডাকসুর প্রতি আস্থা আছে কিনা। শিক্ষার্থীরা কিন্তু ডাকসুর প্রতি আস্থা রাখেনি এবং তারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবারও অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ৫ম দিনের মত এদিন ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে তারা। ডাকসুর উপর আস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে আন্দোলনের মুখপাত্র শাকীল মিয়া বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা কি চায় সেটা ডাকসুকে বুঝতে হবে। নইলে তারা ডাকসুর উপর কিভাবে আস্থা রাখবে।
বৃহস্পতিবার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাল আমরা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেব। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই সিদ্ধান্ত নিবে আন্দোলন চলবে কিনা। রাত ১০টায় প্রতিবেদন লেখার সময়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে কিনা জিঙ্গেস করলে তিনি বলেন, ক্লাস পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আন্দোলনের অন্যতন সমন্বয়ক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে। আমরা কাল সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করবো।