গোঁজামিলে চলছে সাত কলেজের কার্যক্রম
শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং সংস্কারের জন্য সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত করা হয়েছে বলে বলা হয়ে থাকে। দুই বছর আগে যখন এই সীদ্ধান্ত হয়, তখন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরাও আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়। দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যায়ের সিলেবাসের তারা লেখাপড়া করবে এবং ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ পাবেন এমন আশায় উদ্যোমী হয়। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি। বলা যায়, কোনো ধরণের পরিকল্পনা ছাড়াই চলছে সাত কলেজের কার্যক্রম।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগ পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় পরিচালিত হতো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজসহ দুই হাজারেরও বেশি কলেজ। ওই সময় এসব কলেজে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২১ লাখ।
তবে ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপ কমাতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। কিন্তু এরই মধ্যে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নিযুক্ত হয়ে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’র মাধ্যমে সেশনজট কমিয়ে আনেন। ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন কারণে সরকারি কলেজগুলোকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার কাজের গতি কমে যায়।
পরে সরকারের উচ্চমহলের একটি সিদ্ধান্তে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এই সাতটি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আদাল হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। যদিও এর পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের বড় ভূমিকা ছিল। সাত কলেজের এমন অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী এক শিক্ষক ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ বায়তুল্লাহ কাদেরী।
তিনি লিখেছেন, ‘‘যেভাবে সাত কলেজের কার্যক্রম চলছে, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনকে এড়িয়ে, অনেকটা লুকোচুরি, অনেকটা গোঁজামিলে। আমাদের শিক্ষকদেরকে কোনোদিন কোনো আলোচনায় ডাকা হয় নি। অথচ কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করার হুমকি দিলেই এদের দাবি মেনে নেবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। এদের দাবির একটি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খাতা দেখলে এদের অনেকেই অকৃতকার্য হয়, তাই খাতা দেখবে কেবল কলেজশিক্ষকরা।
এদের দাবি আদায়ের ধরন দেখেই হয়তো ঢাবি শিক্ষার্থীরা নেমেছে। এসবের সুষ্ঠু বিহিত হওয়া প্রয়োজন, আগপিছ ভেবে, অভিভাবকসুলভ দায়িত্ববোধ থেকে বিষয়টির সমাধান হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ সাতকলেজসহ ঢাবি শিক্ষার্থী সকলেই আমাদের সন্তান। কোনো পক্ষই যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কেউ যেন সুযোগসন্ধানী না হয়ে ওঠে।
বিষয়গুলো কেবল প্রশাসনিক নয়, অ্যাকাডেমিকও। ছাত্রদের জীবন নিয়ে আমরা কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি না। পারি না কোনো তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিতে। বিশ্ববিদ্যালয় ভালো চলুক। ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো থাকুক।’’