৭ কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের এক দাবিতে আন্দোলন ঢাবি শিক্ষার্থীদের
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৯, ১১:৪৩ AM , আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৩ AM
সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন অনুষদ প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অধিকাংশ বিভাগের ক্লাস বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ভাইভা পরীক্ষাও। এর আগে অধিভুক্তি বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে ভিসি চত্ত্বরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই। আমরা শুরুতে প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু তারা (সাত কলেজের শিক্ষার্থী) আমাদের লাল বাস আটকে দেয়, আমাদের বোনদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। তারা এতো সাহস কোথায় পায়?’
গতকাল শনিবার (২০ জুলাই) সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা স্লোগানে বলেন, ‘ঢাবির চামড়া, তুলে নেবো আমরা’। এর প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। আর এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানান তারা।
সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েও যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অবরোধ করে রাখা হয়েছে টিএসসি মোড়ও।
জানা গেছে, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে আজ ভাইভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ইনস্টিটিউটের গেটে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় ভাইভা প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটছে। সেখানে অপেক্ষা করছেন ভাইভা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা। তবে আগে যারা এসেছেন তারা ভাইভা দিতে পেরেছেন।
ভাইভা দিতে আসা সিফাত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আমরা আধা ঘন্টা হল ভাইভা দিতে আসছি, কিন্তু আমাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিতরে কারো সাথে কথা বলতে পারছি না। গেট আটকিয়ে রাখার কারণে বাইরে দাড়িয়ে আছি।
ফ্রেঞ্চ ভাষার আশিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি আসছি ১০টা ১৫ মিনিটে। কিন্তু আমাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে। আমরা বলছি, ভিতরে ভাইভা হচ্ছে কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা শুনতে রাজি নয়। যার ফলে আমরা রোদ্রের মধ্যে দাড়িয়ে আছি।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যের ফরহাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যেহেতু আমাদের আন্দোলন চলছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। যাদের ভাইভা আছে পরে নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট স্যার স্যার আমাদের এ বিষয়ে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আইএমএলের পরিচালক শিশির ভট্টাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যারা ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি পালন করছে তাদের জানা উচিত এখানে ক্লাস হচ্ছে না, ভর্তি কার্যক্রম ও ভাইভা হচ্ছে। ওদের তালা লাগানোর কারণে শিক্ষার্থীরা ঢুকতে পারছে না। তবে যারা আগেই ঢুকেছে তারা ভাইভা দিচ্ছে। যারা এখনও ঢুকতে পারেনি শিক্ষকরা ২টা পর্যন্ত থাকবে তারা যখনই আসে দিতে পারবে। না পারলে পরেও তাদের ভাইভা নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মাদ সামাদের গাড়ি আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। সকাল পৌনে ১০টার দিকে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে তাঁর গাড়ি আটকে দেওয়া হয়।
এময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। ‘প্রসাশন করে কী, খায় দায় ঘুমায় নাকি’, ‘নির্লজ্জ প্রশাসন, ধিক্কার, ধিক্কার’, ‘ঢাবির সম্মান, নষ্ট হতে দেবো না’, ‘সাত কলেজ বাতিল চাই’, ‘রক্তে ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’ ইত্যাতি স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন, কলা ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদসহ কয়েকটি ভবনে তালা দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে অধিকাংশ বিভাগের ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। বিঘ্ন ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও।
পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রো উপাচার্য। চার দফা দাবি থেকে সাত কলেজ বাতিলের এক দফায় আজ আন্দোলন হচ্ছে। ১১টার সময় আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন শুরু হবে। রেজিস্ট্রার ভবন থেকে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ হয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জড়ো হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান করবে তারা।
এর আগে সকাল ৮টায় কলা ভবনের সামনে সরজমিনে গিয়ে দেয়া যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাস করতে আসলেও ৩ জন ছাত্রী ও ৩ জন ছাত্র মূল ভবনে তালা লাগিয়ে হাতে ফেস্টুন নিয়ে বসে আছে। এসময় ক্লাস করাতে আসা শিক্ষকরা ৭ কলেজ সমস্যার সমাধান আস্তে আস্তে হবে আশ্বাস দিয়ে তালা খুলে দিতে আহ্বান জানালেও তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেননি।
আন্দোলনকারীরা জানান, অধিভুক্তি বাতিলের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত তালা খুলবে না।আন্দোলনকারীদের দাবি, অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের ঢাবির শিক্ষার্থী পরিচয় দেয়, ফলে তাদের পরিচয় সংকটে পড়তে হচ্ছে। এ আন্দোলনে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বেশি অংশ নিতে দেখা গেছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের একাংশের আন্দোলনের ফলে সকালে ক্লাস করতে এসে ফিরে গেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে ৮টায় কর্মচারীরা তালা খুলতে এসেও আন্দোলনকারীদের বাঁধার সম্মুখীন হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে আন্দোলন কর্মী আসিফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা রেজিস্ট্রার বিল্ডিং, কলাভবন, এফবিএস ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে তালা ঝুলিয়েছি। প্রশাসন দাবি মেনে না নিলে তালা খুলব না।