এরশাদের মৃত্যুতে ঢাবিতে ঘৃণা প্রকাশ
স্বৈরাচার সরকার হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের স্বাভাবিক মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। একই সাথে স্বৈরাচার সরকার এরশাদের স্বাভাবিক মৃত্যুতে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন তারা। রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা এই ঘৃণা প্রদর্শন করেন।
ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের একজন কুখ্যাত স্বৈরাচার শাসক। তার মত স্বৈরাচারের মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল ফাঁসির দড়িতে কিন্তু হলো স্বাভাবিক মৃত্যু। যা শহীদদের জন্য অপমানজনক। তার স্বাভাবিক মৃত্যুতে শহীদ ডাক্তার মিলন, রাউফুন বসুনিয়া, জয়নাল এর মত শহীদদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তার স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য দায়ী বাংলাদেশের অপরাজনীতি। বাংলাদেশের এমন অপরাজনীতির কারণেই তিনি আজ স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এ সময় তারা এরশাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে প্রদর্শন করেন।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, এরশাদ বাংলাদেশের একজন কুখ্যাত স্বৈরাচার। তার হাতে ক্ষমতা থাকার সময় ছাত্রদের উপর অনেক গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। তাজুল এর কথা আমরা জানি তাকে হত্যা করা হয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকা শহরের নয়, সারা দেশেই এরশাদের গুণ্ডা ও সেনাবাহিনীর হাতে অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, একজন স্বৈরশাসক আজকে যে মর্যাদার সাথে মৃত্যুবরণ করলেন এটা তার সাথে হওয়ার কথা ছিল না। তাকে জেলখানা বা ফাঁসির কাষ্টে ঝুলে মরার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অপরাজনীতির কারণে তিনি আজ রাষ্ট্রীয় সম্মান পাচ্ছেন। তাই আমরা মনে করি এটি শহীদদের সাথে একটি প্রতারণা। ডাক্তার মিলন, রাউফুন বসুনিয়া, জয়নাল এর প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আজকে আমরা এখানে ঘৃণা প্রদর্শন করছি। আজকের শহীদদের রক্তের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তার সাথে স্বাভাবিক মৃত্যু কাম্য নয়।
ছাত্র ইউনিয়নের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল করিম বলেন, স্বৈরাচার সরকার এরশাদের বিরুদ্ধে আজকে আমাদের এই নীরব প্রতিবাদ। আজকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের বিচার হয় না। কিন্তু যারা অপরাধী তাদের আজ স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এরশাদ শ্রমিক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন সব জায়গায় হামলা চালিয়েছে তার পুলিশ বাহিনী দিয়ে। আমাদের অনেক ভাই শহীদ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত যাদের হত্যার বিচার পাই নাই। তার স্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের কাছে একটা দুঃখজনক বিষয়। তাই আমরা তার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করতে এখানে দাঁড়িয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের বিচার না করে এই এরশাদের মৃত্যুতে সরকার শোক জানাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
ঘৃণা প্রদর্শনীতে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ সহ ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
আজ রোববার (১৪ জুলাই) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ৯০ বছর বয়সী এরশাদ রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২২ জুন সিএমএইচে ভর্তি করা হয় তাকে। এর আগেও তিনি একাধিকবার দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেন।