১৩ জুলাই ২০১৯, ১৩:৫৩

পা বাড়ালেই ঠেকে মল-ময়লা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। পৃথিবীর সব রাষ্ট্র তাদের নিজেদের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম দেয় কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক উল্টো একটি দেশের জন্ম দিয়েছে। এ গৌরবগাঁথা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমস্যার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আবর্জনা ও মল-মূত্রের ছড়াছড়ি অস্বস্থিতে ফেলছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই এই মল-মূত্র ও আবর্জনার ভাগাড় নিয়ে প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ। 

ক্যাম্পাস সরেজমিনে প্রতিবেদক পরিদর্শন করে দেখেছে, ক্যাম্পাসের টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা, ভিসি চত্বর,  মল চত্বর, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে, কার্জন হলের সামনের এলাকাসহ আরও বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময় ময়লা- আবর্জনা একং মূত্রের গন্ধে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিষয়টি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়েও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু কেন কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না তাই উপলব্ধি করা যাচ্ছে না। এছাড়া এই একাধিকবার গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এসব ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের কারণে দূষিত হচ্ছে ক্যাম্পাস পরিবেশ। স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় ২ হাজার শিক্ষক ও ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য কার্যালয়ের আশপাশে ময়লা ফেলার জন্য তেমন সুবিধাজনক স্থান না থাকার কারণে ক্যাম্পাসের ভিতরে নিজেদের সুবিধা মত জায়গায় ময়লা ফেলছে সংশ্লিষ্টরা। খোলা রাস্তা-মাঠে সর্বত্র ময়লা ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝেও তেমন সচেতনতা দেখা যায়নি। তারাও দিব্যি ফেলে চলেছে দৈনন্দিনের কাজের উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনা। 

এছাড়া ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনবিহীন ভাসমান দোকানের সংখ্যা দিন দিন মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব দোকানের মালিকরা স্বাস্থ্য সচেতনের ব্যাপারে পুরোপুরি অজ্ঞ। ক্যাম্পাসে পলিথিন, আইসক্রিমের খোসা, ডাবের খোসা ঠিকমত ঠিক জায়গায় না ফেলে রাম্তায় ফেলে রাখা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাতের চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে অনেকে মনে করবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শ্রমিক, মজুরের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। টিএসসি, ভিসি চত্বরসহ আরো অনেক জায়গায় রাতের বেলা শ্রমিক, মজুরেরা আশ্রয় নেয়। দিনের বেলা এইসব দিন মজুরদের বেশি বিচরণ দেখা যায়। কিন্তু তাদের মল-মূত্রের জন্য কোন সুনিদিষ্ট জায়গা না থাকায় ক্যাম্পাসে যেখানে তারা একটু ইটের দেয়াল ও গাছের আঁড়াল পায় সেখানেই তারা মল-মূত্র ত্যাগ করে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো দিয়ে হেঁটে চলা কাষ্টসাধ্য হয়ে। রাস্তার একটু দূরে দূরে ময়লার স্তুপ ও মল-মূত্রের গন্ধ। সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর যেন গরীবের টয়লেট। যেখানে হর হামেশায় যে কেউ মল-মূত্র ত্যাগ করতে পারে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশের রাস্তার ফুটপাত, টিএসসি থেকে শুরু করে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র-বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তার ফুটপাত, প্রশাসনিক ভবনের চারপাশ, শহীদ মিনারের আশপাশ ও জগন্নাথ হলের পাশের রাস্তার ফুটপাতে ছিন্নমূলসহ পথচারীদের মল-মূত্র ত্যাগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে দুর্গন্ধময় ফুটপাতের সংখ্যা ও ব্যাপ্তি বাড়ছেই।

তবে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায় করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কারণ প্রশাসন চাইলে বিষয়টি সমাধান করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি কর্পোরেশন কাজ করলেও তারা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হামিম আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু ভর্তি হওয়ার পরে দেখি অনেক সমস্যার সমাহার এ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে রাস্তা-ঘাটের যে দুরবস্থা, এ রকম যদি আর কিছুদিন চলে তাহলে গন্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়বে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, “বিষয়টি আসলেই স্পর্শকাতর। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। সমস্যা সমাধানের জন্যে আমরা প্রদক্ষেপ নিয়েছি। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নিয়ে আমরা এ বিষয়ে একটি কর্মশালা করব। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত টেকশই ডাস্টবিনের ব্যাবস্থা করব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এ দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন পালন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় তার বিভিন্ন আবাসিক হল ও অনুষদ থেকে উৎপাদিত বর্জ্য পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে সাহায়তা করে।

ফুটপাতে মলমূত্র ত্যাগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী ও বহিরাগতরা একাজ করে থাকে। বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নেয়া হলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ। আর আমরা তাদের জন্য পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করতে পারি না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কোন পাবলিক প্লেজ না।’