ঢাবি এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, সেজন্য বলছি। এখানে লেখাপড়ার একটা ঐতিহ্য ছিলো। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে একটা শ্রেণি অস্ত্র হাতে নিয়ে নেমে পড়ল। ৭৫’র পর আরও ব্যাপকভাবে এর প্রচলন দেখা যায়। গুলি-অস্ত্র-বোমার শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যেত না। সেশনজট গতানুগতিক ব্যাপার ছিলো, দুপুর ২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসই হতো না। আমরা সরকারে আসার পর ধীরেধীরে এসব অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছি।
সোমবার গণভবনে চীন সফরের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থী হওয়ায় বসার সুযোগ পেত না। একটা রুমে ১০০-২০০ শিক্ষার্থী। অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। তাই আমরা প্রত্যেক জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। আমরা যখন প্রথম সরকারে আসি দেখলাম বিজ্ঞানে পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম, তখন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিই।
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পড়ালেখার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আমি চাই, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দর পরিবেশ থাকুক, পড়াশোনা হোক। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। বিশ্ব এখন খুবই প্রতিযোগিতাময়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ফিরিয়ে আনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনোদিনও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল না
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়। এটা কোনোদিনও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল না। এটা একটা বদনাম দিয়ে গেছে। যখন এটাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয় তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল ৫ থেকে ৬ হাজার। আর শিক্ষক ছিল ৬৫ থেকে ৬৬ জন।
জবি উপাচার্য বলেন, এটা কোনোদিন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল না। এটা হলো আমার প্রথম আবিষ্কার। আস্তে আস্তে আমরা অক্সফোর্ড হওয়ার চেষ্টা করছি। ওই সময় বিজ্ঞান গবেষণাগার এটা সেটা কিছুই ছিল না, এরপরেও এটাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে চলে গেছে।
শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘উচ্চশিক্ষা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জবি উপাচার্য।
তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম অক্সফোর্ডে যাই তখন আমি দেখার চেষ্টা করি কেনো আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। আমি দেখলাম একমাত্র গাজীহুল উম্মুল স্কুলের সঙ্গে আমাদের অক্সফোর্ডের মিল আছে। কারণ অক্সফোর্টের বয়স তখন প্রায় ৬শ বছর। হঠাৎ করে এগুলো আমরা বলে ফেলি আসলে এগুলো আমরা ঠিক করি না।
তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান থাকার সময় আমাদের গড় আয়ু ছিল ২৭ বছর আর এখন আমাদের গড় আয়ু বেড়ে ৭৪ বছর হয়েছে। শুধু শিক্ষা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। যদি এভাবে যায় এক সময় মাটির নিচে দেবে যাবে।
শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আলু উৎপাদন বেড়ে গেছে। শাকসবজি উৎপাদন বেড়েছে, বিশ্বে আমরা ৮ম অবস্থানে রয়েছি।আমাদের সবকিছুতে উন্নতি। তবে লেখাপড়ার বিষয়ে তেমন নেই।