০৩ জুলাই ২০১৯, ২১:০৯

শিক্ষায় আলোকিত হতে চায় ঢাবির ক্যান্টিন বয়

নাঈম হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। মেধাবীদের লালন, পরিচর্যা ও সঠিক দিক-নির্দেশনা দেওয়ার যেন মূলমন্ত্র সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যায়তনের। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে, মেস বা দোকানে যারা কাজ করেন তাদের বেশির ভাগ শিশু। যাদের বয়স ৮ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।

বাংশাদেশের জাতীয় শ্রম আইন, ২০১৬ অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে কোনো প্রকার কাজে নিযুক্ত করা যাবেনা। ১৪ বছরের উর্ধ্ববয়সী কিশোরদের দৈনিক ৫ঘন্টা কর্মসময় নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ যদি শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে তাহলে তার পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। অথচ শিশুশ্রম এখন অতি সাধারণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনগুলোতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু। যে শিশুগুলো ক্যান্টিনগুলোতে কাজ করে তাদের দিয়ে কাজ করানোর নিষেধ আছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক। কারণ তারা শিশু, তবুও ঢাকা বাঁচানোর জন্য ক্যান্টিন, দোকান মালিক বা মেস কর্তৃপক্ষ তাদের দিয়ে কাজ করায়। এই অন্যায় দেখার কেউ নাই। শিক্ষার্থীরা যখন ব্যাগ নিয়ে ক্লাস বের হয়, ঠিক তখনই এ শিশুদের ক্যান্টিন কিংবা দোকানের চা আনা-নেওয়ার কাজ করতে হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না টেবিল, প্লেট-গ্লাস এমনকি ক্যান্টিন ধোয়া-মোছার কাজও। মূলত দারিদ্র্যের কারণে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হয় বিভিন্ন ক্যান্টিন, মেস বা দোকানে। আর কর্তৃপক্ষ কম টাকায় তাদের খাটিয়ে নিতে পারছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সর্বশেষ স্যার এ এফ রহমান হলের ক্যান্টিন যে নামটি যোগ হয় তার নাম নাঈম হোসেন। সে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার হক সাদর ছেলে। নাঈম এর বয়স দশ বছরের বেশি হবে না। তবুও প্লেট ধোয়া থেকে শুরু করে ভাতের বড় বড় থালা আনা নেওয়া করছে। কখনো কেউ ডাকছে এদিকে আয়, কখনও অন্য শিক্ষার্থী ডাকছে এদিকে আয়। এই আসা যাওযার মধ্যে দিন চলছে তার। শরীরে কোন ক্লান্তি নাই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে থেকে জানা যায়, নাঈম এর বাবা হকশাদ একজন রিক্সাচালক। ছেলের পড়াশোনার খরচ যোগাতে না পেরে তাকে স্যার এফ রহমান হলের মেসে দিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাঈম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমার বাবার অনেক টেহা ঋণ। আমার পড়তে ভাল্লাগে না। তাই বাবা তাকে এখানে দিয়ে দিছে। আমারে আলামিন ভাই এখানে আনছে। আমি এহন পড়তে চাই।’