সন্ত্রাস না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; কে বড়?
আজকে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে তা হলো সন্ত্রাসীরা বড় না দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বড়। জনমনে অনেক প্রশ্ন, এখন দিনদুপুরে সন্ত্রাসীরা মানুষকে কোপাচ্ছে অথচ তারা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগালের বাইরে। ঘটনা ঘটার অনেক সময় গড়িয়ে গেলেও পুলিশ মূল হোতাদের আটক করতে পারছে না। এটা কি তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা নয়?
দেশে এখন যে হারে কোপাকুপি আর চাপাতির মহড়া চলতেছে, সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে জনগণ এখন প্রতিটি মহুর্তে আতঙ্কে থাকে। তারা ঘর থেকে বের হলেই ভাবে আসলে সুস্থভাবে আবার ঘরে ফিরতে পারবে কি-না।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে এর পিছনে কারণ কি? বাস্তব অসংখ্য প্রমাণ ও বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটা প্রতীয়মান হয় যে, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য এসব ঘটনা বারবার ঘটে চলছে।
আজকে বিশ্বজিৎ হত্যার মূল হোতারা যখন খালাস পেয়ে যায় তখন সঠিক বিচার এদেশে নিরবে নিভৃতে কাঁদে। আজকে তনু হত্যার বিচার হয় না; আজকে সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবেদন মাসের পর মাস আদালতে ঝুলে থাকে কোন বিচার হয় না; আজকে ত্বকী হত্যার বিচার হয় না। এই যখন দেশের অবস্থা তখন সঠিক বিচার প্রত্যাশা করাটাও বোকামি, তারপরও নিরীহ জনগণ বিচারের বাণী নিয়ে রাজপথে আওয়াজ তোলে।।
গতবছরের আজকের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ছাত্রলীগের কতিপয় সন্ত্রাসী আমাদের উপর নির্মমভাবে হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত হয় সহযোদ্ধা নুরুল হক নুর সহ অর্ধশত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মী। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় অসংখ্য প্রমাণ থাকা সত্বেও তাদের বিচার আজ পর্যন্ত করা হয় নি। যারা হামলা করেছিল তাদের ছবি সহ অসংখ্য প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু অন্ধ দলকানা প্রশাসন আজ পর্যন্ত কোন একশন তো দূরে থাক এবিষয়ে আশ্বাসও দেন নি। এই অবস্থা যখন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন সমগ্র দেশের চিত্রটা কি তা আমার আপনার সহজে বোধগম্য।
আমরা যখন পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মাহফিলে যোগ দেওয়ার জন্য বগুড়া যায়, সেখানেও দিনদুপুরে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। তার বিচার আজও হয় নি, আর কখনো হবেও না।
আজকে দিবালোকে রিফাতকে কুপিয়ে মারা হলো, ঠাকুরগাঁও এ একজন নার্সকে কুপিয়ে মারা হলো। সন্ত্রাসীরা গতকালকে এক লৌহমর্শক ঘটনা ঘটালো সাতক্ষীরায়। ছোট্ট একটি শিশুকে কুপিয়ে তার আয়ের শেষ সম্বল রিক্সাটা ছিনিয়ে নিয়ে গেলো। অথচ পুলিশ কাউকেই আটক করতে পারলো না।এখন সেই শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পাঞ্জা লড়ছে। আল্লাহ যেনো তাকে দ্রুত ভালো করে দেয় এটাই প্রত্যাশা এবং দোয়া।
এসব ঘটনা দেখলে স্বাভাবিক একজন মানুষ হিসাবে ঠিক থাকা যায় না। আবার কথাও মানুষ বলতে পারে না। কথা বললেই নেমে আসে জেল জুলুম হামলা মামলা। পুরো দেশে বিরাজ করছে এক ভয়ের সংস্কৃতি।
আসুন আমরা এই ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসি। সবাই এক কাতারে দাঁড়ায় এবং সরকারকে বাধ্য করি অপরাধীদের সঠিক বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানে।
দেশ হোক আমার, আপনার সকলের...!
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যুগ্ম-আহবায়ক, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।