ঢাবির বাজেট পাস, দুই দিনব্যাপী অধিবেশনে যা যা হলো
ফাইন্যান্স কমিটি ও সিন্ডিকেটে অনুমোদনের পর আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কার্যক্রম পরিচালনায় ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেট পাস হয়েছে। এর আগে গতকাল বুধবার সিনেট অধিবেশনের প্রথম দিনে বাজেট ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন। এবছর বাজেটের আকার বাড়লেও গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেট অধিবেশনে এই বাজেট পাস করা হয়। এছাড়াও অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যান ও উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামানসহ সিনেট, সিন্ডিকেট , নির্বাচিত রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এবারের সিনেট অধিবেশনের বিশেষ দিক ছিলো, দীর্ঘ ২৬ বছর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া তুলে ধরতে পাঁচজন ছাত্র-প্রতিনিধি সিনেটে উপস্থিত ছিলেন। পাঁচ ছাত্র-প্রতিনিধি সিনেটে উপস্থিত থাকলেও প্রথম দিনে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন এবং দ্বিতীয় দিনে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর ও সদস্য তিলোত্তমা শিকদার বক্তৃতা দেন।
দুই দিনব্যাপী এই বাজেট অধিবেশনে উপাচার্যের অভিভাষণের ওপর আলোচনা পর্বে সিনেট সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
বুধবার প্রথম দিনের আলোচনায় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ রোধে কমিটি গঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ট্রাফিক সিস্টেমের পরিবর্তন, ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন ও মিশন অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রকাশিত জার্নালের মান ও অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্সিকে গুরুত্ব দেয়া, শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শহীদ মিনারে সব কর্মসূচি বিকেল তিনটার পর শুরু করা, বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সেমিনার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে হল নির্মাণ, মেডিসিন অনুষদের ডিন নির্বাচন প্রভৃতি দাবি তুলে ধরা হয়।
এদিন বক্তব্য দিতে গিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন কলঙ্কিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের গাড়িতে হামলা ও ২০১৮ সালে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের দাবি জানান।
তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, ডাকসু নির্বাচনে কারচুপির ঘটনা ঘটেনি, বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।
আজ দ্বিতীয় ও শেষ দিনের আলোচনায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ন্যুনতম ৩০ শয্যাবিশিষ্ট করা, শিক্ষকদের সেশন বেনিফিট বহাল রাখা, সকল জার্নালের অনলাইন সফট ভার্সন তৈরি, ডেল্টা প্ল্যান বা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ, সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়কে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রভাষক পদের পরে উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়া প্রমোশন না দেয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বছরে দুইবার সিনেটের অধিবেশন ডাকা, গবেষণা সেল গঠন, সক্ষমতা ছাড়া নতুন বিভাগ না খোলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি প্রভৃতি দাবি তুলে ধরা হয়।
আজ ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর তার বক্তব্যে ২০১৮ সালে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পরে এসএম হলে ফরিদের ওপর হামলা হয়। তার বিচার এখনও হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকলে তা দ্রুত দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।
নূর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা থাকলেও তাদের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র ১৭১টি। এজন্য তিনি নিজস্ব প্রকাশনায় গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানান। এছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রকাশিত জার্নাল অনলাইনে আপডেট করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক পদায়ন হয়। এ থেকে পরিত্রাণ দরকার। শিক্ষার্থীরা যথাযথ নার্সিং পায় না। শিক্ষকরা তাদের ইচ্ছামতো ক্লাস নেন। এটা মনিটরিং করা দরকার যে, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন কিনা। তিনি প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে সিট দেয়ার দাবি জানান। ছাত্র সংগঠন যেন হল চালাতে না পারে তার জন্য হল প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখার দাবিও জানান ডাকসু ভিপি নূর।
ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্টিফিকেটভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। এখানে গবেষণা খাতে বরাদ্দ কম। যেহেতু র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ তাই আমি গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি জব অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কার্যকর করা, বৈধ উন্নয়ন ফি নির্ধারণ, হলের ছাত্রবৃত্তির স্বচ্ছতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বাঞ্চল ক্যাম্পাসের দ্রুত উন্নয়ন, ভর্তি প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক ভবনের আধুনিকায়ন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিকৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা, ঢাবি ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা ও নারী শিক্ষার্থীদের হেরেসমেন্ট সেল বক্স বসানোর দাবি জানান।
এদিকে, আজও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি নিয়ে সোচ্চার ছিলেন অনেক সিনেট সদস্য। তারা বলেন, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন একশ ভাগ যথাযথ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য এটাই উপাচার্যের প্রথম কাজ হওয়া উচিত। প্যানেল যত শীঘ্র করা যায়, ততই ভালো হবে। এর ফলে যিনি দায়িত্বে আসবেন তিনি দ্রুত যথাযথভাবে সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
অন্যদিকে, আজ সিনেট অধিবেশনে রামেন্দু মজুমদারকে জগন্নাথ হলের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ছয়জনের একটি প্যানেল অনুমোদন দেয়া হয়।