ভাগাভাগি মেলাতেই শোভন-সনজিত সিনেট সদস্য!
ভাগাভাগি মেলানোর জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) প্রতিনিধি না হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতিকে সিনেট সদস্য করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল ও ছাত্র রাজনীতি নিয়ে অভিজ্ঞজনদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগের ভাইটাল পদ চারটা। সেগুলো হলো কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে ডাকসুর ভাইটাল পদ তিনটা। সেগুলো সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও এজিএস।
গত মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনের সময় প্রার্থী ভাগাভাগি করতে গিয়ে ডাকসুর ভাইটাল পদ তিনটা থাকার কারণে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বাদ পড়ে যান। নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার কারণে সনজিত চন্দ্র দাস মন খারাপ করেছিলেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন নির্বাচনে দাঁড়ালেও নুরুল হক নুরের কাছে হেরে যান। ভিপি পদে হারার কারণে রেজওয়ানুল হক চৌধুরীও মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙ্গে পড়েন। তার সমর্থকরা নুরুকে ভিপি মানেন না বলে টানা দুইদিন ভিসির বাসার সামনে আন্দোলন করে।
কিন্তু ডাকসুর পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি সিনেটে পাঠানোর সময় আসলে নির্বাচনে হেরে যাওয়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ আসে। তাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী সিনেটে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিতকে করার সুপারিশ করে। যেটা অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।
নির্বাচনে হেরে যাওয়া ও নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ডাকসুর বাইরের দুজনকে সিনেটের মেম্বর করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাব গোলাম রাব্বানীর কাছে জানতে চাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন হোসের নাম্বারে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ডাকসুর সদস্য তানবীর হাসান সৈকত বলেন, ভাগাভাগি পরের কথা কিন্তু সিনেট সদস্য নির্বাচনের জন্য ফরমালি কোন ভোট হয়নি। আমাদের প্রথম মিটিংয়ে বিষয়ে কথা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল পরে ফরমালি এ বিষয়ে কথা হবে কিন্তু পরে আর ভোট হয়নি। আমি জানি না কীভাবে তারা সিনেট মেম্বার হলো।
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ডাকসু থেকে ৫ জন সিনেট সদস্য মনোনয়ন করা প্রসঙ্গে ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ডাকসুতে কোন আলোচনা বা মিটিং হয়নি। ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ডাকসু থেকে সিনেটে ৫ জন সদস্য মনোনীত হয়। ডাকসু থেকে কীভাবে ৫ জন সদস্য মনোনীত হবে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে তার কোন স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও বিগত ডাকসুর কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ভিপি-জিএস অন্যদের সাথে আলোচনা করেই ৫ জন সদস্যের নাম চূড়ান্ত করেছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘ভিপি সংসদের প্রধান নির্বাহী’।
অথচ ডাকসুর সদস্যদের সাথে কোন ধরণের আলোচনা, মিটিং না করেই এমনকি ভিপির সম্মতি ও স্বাক্ষর ছাড়াই জিএস নিজের পছন্দ মাফিক, ডাকসুর নির্বাচিত সদস্যও নয় এমন অনির্বাচিত ২ জনসহ ৫ জনের নাম উপাচার্য বরাবর প্রেরণ করে। উপাচার্য স্যারকে বিষয়টি অবহিত করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক এমন একটি বিতর্কিত প্রস্তাব গৃহীত হওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নীতি বর্হিভূত।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাবি ভিসি মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি ঢাবির সিনেট সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। ডাকসু বহির্ভূত দুইজন সদস্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা হতেই পারে। ডাকসুর যারা প্রতিনিধি আছে তারা চাইলে এটা হতে পারে।