ঢাবির বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ মাত্র ২%
- সাইফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০১ জুন ২০১৯, ১০:১৩ AM , আপডেট: ০১ জুন ২০১৯, ০২:০২ PM
গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ— এই হলো উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। আর বিষয়ানুগ গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের সুপ্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক। গবেষণাকাজে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অতীতের মতো উজ্জ্বল নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে বরাদ্দের চিত্রে নজর দিলেই তা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ অর্থবছরের অনুন্নয়ন বরাদ্দ চূড়ান্ত হয়েছে। ৮১০ কোটি টাকার বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ মাত্র ১৬ কোটি, যা অনুন্নয়ন বাজেটের মাত্র ২ শতাংশ। উন্নয়ন বাজেট বিবেচনায় নিলে গবেষণা খাতের বরাদ্দের হার আরো নিচে গিয়ে ঠেকবে। শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা বরাদ্দের এ চিত্র হতাশাব্যঞ্জক বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালন বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এরমধ্যে গবেষণায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর বিশেষ গবেষণায় অনুদান বাবদ রাখা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে গবেষণা খাতে মোট বরাদ্দ দাঁড়ালো ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট বরাদ্দের মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গবেষণা খাতে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাজেটে গবেষণা খাতে মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা হল প্রাণ। অথচ বাজেটে গবেষণায় মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বাজেটের মোট কলেবর বেড়েছে। কিন্তু এর বড় অংশই যাবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাবদ। আবাসন, পরিবহনসহ ছাত্রস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাই উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাসহ ছাত্র সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গবেষণা না হওয়ার কারণ হিসাবে অনেকেই বরাদ্দ না থাকাকে দায়ী করে। তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। আমার কাছে মনে হয়,শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রকাশনা গুরুত্ব না পাওয়ার ফলে শিক্ষকরা গবেষণায় উত্সাহিত হচ্ছে না। একজন শিক্ষক যদি মানসম্মত গবেষণা ও প্রকাশনা ছাড়াই নামমাত্র প্রকাশনা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় অধ্যাপক হয়ে যায়। তাহলে গবেষণা কার্যক্রমে তো মনোযোগী না হওয়ায় স্বাভাবিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স কমিটির সভায় এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেট সভায় বাজেট অনুমোদনের পর সিনেটের বাজেট অধিবেশনে তা পাশ করা হবে। বাজেটে আয়ের উত্স হিসেবে দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ও নিজস্ব আয়। ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেটে ইউজিসি দেবে ৬৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফি বাবদ, ভর্তি ফরম বিক্রি, বেতন-ভাতাদি থেকে কর্তন, সম্পত্তিসহ নিজস্ব খাতগুলো থেকে আয় হবে ৭০ কোটি টাকা। মোট আয় হবে ৭৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
সে হিসাবে আগামী অর্থবছরের ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বিদায়ী অর্থবছরের ঘাটতির বোঝা তো আছেই।