এসআই বাবাকে ঊর্দি ফেরত দিতেই পুলিশ ক্যাডার ঊর্মি!

আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএর শিক্ষার্থী শেখ সুরাইয়া ঊর্মি ৩৭তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার এই সাফল্যের গল্প লিখছেন মো. আমজাদ হোসেন ফাহীম

শেখ ওমর আলী ও রমেচা ওমরের সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ সুরাইয়া ঊর্মি। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে ঊর্মিই ছিলেন সবার বড়। বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জে হলেও ঊর্মি জন্মেছেন নেত্রকোনায়। বাবা পুলিশের (এসআই) কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে তাকে পড়তে হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। যশোরের পুলিশ লাইন স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ২০০৫ সালে এসএসসি ও বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল-কলেজ থেকে যথাক্রমে ২০০৭ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান।

এসএসসি ও এইচএসসিতে কাঙ্ক্ষিত ফল করায় বাবা-মা চেয়েছিলেন মেডিক্যালে পড়ুক মেয়ে। তবে ঊর্মির ইচ্ছা ছিল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের কথামতো মেডিক্যালে কোচিং করেন, কিন্তু অল্পের জন্য চান্স হয় না। তখন একেবারে ভেঙে পড়েন, কারণ আর কোথায়ও ফরম তোলা হয়নি। সেকেন্ড টাইম তাদের কথামত আবারও মেডিক্যালের জন্য প্রস্তুতি নেন। কিন্তু হায়, এবারও হলো না! তখন পুরো হতাশ হয়ে যান! পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি ও আইন বিষয়ে সুযোগ পেলেও নিজের অপছন্দের বিষয় হওয়ায় ভর্তি হননি। পরে নিজের পছন্দের বিষয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

ঊর্মির ভাষ্যে, ‘হতাশা নিয়েই অনার্সে ভর্তি হই। প্রথম প্রথম দিনগুলোও কাটছে অনেক কষ্টে। তবে পরবর্তীতে নিজেকে গুছিয়ে নিই বিভিন্ন ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়ে (ডিবেটিং ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, আইটি ক্লাব)।’ কমিনিউকেশন স্কিল ও প্রেজেন্টেশন স্কিল আগে থেকে ভালো থাকায় ঊর্মি সকলের দৃষ্টি কাড়েন অল্পতেই। অনার্সে ৩.৭৪ নিয়ে উত্তীর্ণ হন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইভিনিং এমবিএ থেকে ৩.৮৬ লাভ করেন।

বাবা পুলিশের এসআই থেকে যেদিন বিদায় নিতে গিয়ে পুলিশের পোশাক জমা দিয়ে আসেন, সেদিন বাবা কান্না দেখে ঊর্মির মনে মনে সংকল্পবদ্ধ হন, ‘যে করেই হোক আমাকে পুলিশের বড় কর্মকর্তা হতেই হবে।’ সেদিন থেকেই ঊর্মি বিসিএস পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। বাবার পাশাপাশি ঊর্মিকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন তার স্বামী মাসুমুল হক।

ছোটবেলা থেকেই অংক, বিজ্ঞান ও ইংরেজিতে অনেক ভালো ছিলেন ঊর্মি। যা করতেন তা অতি মনোযোগ দিয়ে করতেন ও তার সেরাটা দিতেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ঊর্মি গুছিয়ে কথা বলতে পারতেন ও সাধারণ বিষয়কেও অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। তার এ গুণগুলো রিটেন ও ভাইভাতে কাজে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

তার পরামর্শ হলো, ‘প্রথমেই সংকল্পবদ্ধ হতে হবে যে, আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে। সে অনুযায়ী নিয়মিত রুটিন মাফিক কৌশল অবলম্বন করে বিসিএসের সিলেবাস দেখে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পড়তে হবে। বাংলা ও ইংরেজির যেকোনো ২টি পত্রিকা নিয়মিত পড়তে হবে আর দেশ-বিদেশের খোঁজখবর রাখতে হবে। গণিত প্রচুর অনুশীলন করতে হবে, আর বেশি বেশি লেখার চর্চা করতে হবে, যা রিটেনে কার্যকর হবে।’

আর ভাইভার জন্য সাহস ও কনফিডেন্স রেখে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারলেই বিসিএস নিশ্চিত হবে বলে আশা করেন তিনি। শেখ সুরাইয়া ঊর্মি স্বপ্ন দেখেন একদিন পুলিশের আইজিপি হবেন এবং দেশ ও জনগণকে ভালো কিছু উপহার দিবেন এজন্য সকলের দোয়া কামনা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ