টাকায় র্যাঙ্কিং: বক্তব্য না বুঝে নিউজ করেছে গণমাধ্যম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে স্থান পাওয়ার জন্য অর্থ দেওয়া নিয়ে কিছু বলেননি বলে জানিয়েছেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমি সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। অথচ কিছু গণমাধ্যমে এটা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে স্থান না পাওয়া নিয়ে কয়েকদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এরমধ্যে শনিবার কিছু গণমাধ্যমে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে স্থান পাওয়ার জন্য অর্থ চেয়েছে লন্ডনভিত্তিক র্যাঙ্কিংকারী সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’।
তবে ওই অনুষ্ঠানে এমন কোন কথা বলেননি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। যুক্তরাজ্য থেকে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, এটি নিয়ে বড় ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তিনি মূলত অন্য দুই র্যাঙ্কিংকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ে সেখানে কথা বলেছেন।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মূলত এএসিএসবি (AACSB) এবং ইকুইনস নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘বিজনেস স্কুল’ নিয়ে কাজ করছি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বমানের র্যাঙ্কিং করে থাকে। আমরা যদি সেখানে যুক্ত হতে পারি তাহলে সেটা তো আমাদের গর্বের বিষয়। অথচ যেটা নিয়ে কথা বললাম না, সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ওই অনুষ্ঠানে মূলত এএসিএসবি (AACSB) এবং ইকুইনস নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছিলাম। তাদের সঙ্গে কাজ করতে হলে প্রথমে ৩০ হাজার ডলার দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এরপর প্রতি বছর ১৫ হাজার ডলার দিতে হয়। সে হিসেবে আমি এক বছরের ৪৫ হাজার ডলারের কথা বলেছি। এটার সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে তা খুবই ভালো হবে। ইতোমধ্যে তাদের সিঙ্গাপুর অফিসেও আমি ঘুরে এসেছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন বলেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যের একটি ইফতার পার্টিতে ছিলাম। সেখানে অন্য অনেক প্রসঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি র্যাঙ্কিং নিয়ে কথা ওঠে। তখন আমি এ বিষয়টি বলি। কিন্তু সেখানে কোন সাংবাদিক ছিল কিনা জানতাম না। এরমধ্যে এ ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হলো।’
তিনি আরো বলেন, ‘এএসিএসবি (AACSB) এবং ইকুইনস নামের প্রতিষ্ঠানটি দু‘টি বিশ্বমানের এবং শীর্ষস্থানীয় র্যাঙ্কিংকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের র্যাঙ্কিংয়ে স্থান পেতে হলে অনেক নিয়ম-কানুন মানতে হয়। বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ও সম্ভবত তাদের সঙ্গে কাজ করছে। সে তুলনায় ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ তেমন নামকরা কোন প্রতিষ্ঠানই নয়।’
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমে এভাবে নিউজ করার ব্যাপারটা খুবই খারাপ হয়েছে। এভাবে না বুঝে মানুষকে অপমান করা ঠিক নয়। আমি র্যাঙ্কিং নিয়ে কাজ করছি সত্য, তবে সেটা এএসিএসবি (AACSB) এবং ইকুইনসের সঙ্গে।’
উল্লেখ্য, লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। সেখানে এশিয়ার ৪১৭টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে তারা। তবে তাতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই।
অথচ নেপাল, শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ও এ তালিকায় রয়েছে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এ চারটি মৌলিক বিষয়ে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এ তালিকায় স্থান না পাওয়ায় তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে কয়েকদিন ধরেই।