১১ মে ২০১৯, ১৫:৫০

ডিজিটালের ছোঁয়া নেই রেজিস্ট্রার ভবনে, ২ দিনের ভর্তিতে লাগে ১৮ দিন!

ঢাবি রেজিস্ট্রার ভবনে কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষের দৃশ্য এবং দীর্ঘ ফরম  © টিডিসি ফটো

ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার যুগে এসেও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেই প্রাচীন পদ্ধতিতে। ঢাবিতে ভর্তির প্রাথমিক কার্যক্রম অনলাইনে হলেও মূল কাজ করতে হয় দুই হাত দৈর্ঘ্যের এক বিশাল ফরম পূরণ করে! সেমিস্টার ফাইনাল ও বাৎসরিক পরীক্ষার প্রবেশ পত্র সংগ্রহ, সেমিস্টার ফি জমা, বৃত্তির কাজসহ যাবতীয় কাজ করতে হয় দীর্ঘদেহী ফরম পূরণ করে। ডিপার্টমেন্ট অফিস থেকে রেজিস্ট্রার ভবন, সেখান থেকে হল অফিস, হল অফিস থেকে ব্যাংকে দৌড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যায় কিন্তু কাজ শেষ হয় না।

সাইফুল ইসলাম প্রলয় নামে মাস্টার্স ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী অভিযোগের সুরে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! মাত্র পাঁচবার রেজিস্ট্রার ভবন, তিনবার হল অফিস ও তিনবার ডিপার্টমেন্ট এবং দুইবার দুটি ব্যাংকে যাওয়ার মাধ্যমে মাত্র ১৮দিনের মধ্যে মাস্টার্স ভর্তি সম্পন্ন করলাম। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এ ডিজিটাল বাংলাদেশে এই আদিম যুগের সিস্টেম কি পরিবর্তন হবে না।

এছাড়াও রেজিস্ট্রার ভবনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা সর্বোপরি প্রশাসনিক কাজের ধীরগতির ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন চাইলেই ডিজিটালাইজড প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করতে পারে যেখানে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনে যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে পারবে।

ঢাবির রেজিস্ট্রার ভবনের অনিয়মে বর্ণনা দিতে গিয়ে শাহিনুর রহমান নামে তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কী আর বলব ভাই, সবই কপাল! সকালে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ গিয়েছিলাম একটা কাজে। সেখানে গিয়ে এই ডেক্স থেকে ওই ডেক্সে যেতে যেতে দেখলাম ১১টা বেজে গেল। কিন্তু ২০৮ নাম্বার কক্ষের দুইটি চেয়ারে কোন কর্মকর্তা নেই। ৩০ মিনিট অপেক্ষার পরে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি অন্য রুমে যেতে বললেন। এভাবেই প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছি আমরা।

মুহাম্মদ ফেরদৌস নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এই বাজে সিস্টেমটা খুবই পীড়াদায়ক। আবার একেকটা সার্টিফিকেট, মার্কসশীট তুলতেও এমন দৌড়াতে হয়। অথচ চাইলেই এগুলো ডিজিটালাইজড করা যায়।

আল আমিন প্রত্যয় নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের ১২৪ নং রুমে জিয়া হলসহ কয়েকটা হলের কাউন্টারে বসা কর্মকর্তাদের ব্যবহার বড় মাপের চামারকেও হার মানায়।

সম্প্রতি রাজধানীর সাত কলেজের অধিভুক্তি ঢাবির প্রশাসনিক কার্যক্রমে মরার উপর খাড়ার ঘা’র মত অবস্থার সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সাজ্জাদুর রহমান নামে শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কিছুদিন আগে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে গিয়েছিলাম একটা কাজে। সেখানে দেখলাম সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভীড়ে ঢুকাই যাচ্ছে না। পরে অনেকক্ষণ ওদের পিছনে লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হলো। তিনি আরো বলেন, যেখানে প্রশাসন নিজেদের ছাত্রদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে সাত কলেজের অন্তর্ভুক্তি ঢাবির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়ার মতো।

অন্যদিকে টাকা জমা দেয়ার সময় বিশেষ করে ভর্তি ও ফাইনার পরীক্ষার সময়গুলোতে ঢাবির জনতা ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে চরম ভীড় লেগে যায়। ব্যাংকগুলোও চলে কচ্ছপ গতিতে। এর ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এবং নষ্ট হয় মহামূল্যবান সময়। জনতা ব্যাংকের টিএসসি শাখায় টাকা জমা দিতে আসা শিক্ষার্থী সিয়ামুর রহমান শিফাত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এসব কাজ চাইলে অনলাইনে বা বিকাশের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের ডিজিটাল আইডি কার্ড, ইমেইল ও ব্যাংক একাউন্ট খুলে দিতো তাহলে আমরা সহজেই এসব কাজ সম্পন্ন করতে পারতাম এবং আমাদের এতো মূল্যবান সময়ও নষ্ট হতো না।

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা আমাদের বাজেট মিটিংয়ে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের বিষয়টা উত্থাপন করেছি। এই সিস্টেমটা যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে সেহেতু পরিবর্তন হতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি আরো বলেন, আমরা এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি এবং আমরা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাবো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আস্তে আস্তে সবকিছু হবে। রেজিস্ট্রার ভবনের কার্যক্রম ডিজিটালাইজ করার বিষয়ে কাজ হচ্ছে। আমরা এটার উন্নয়নে কাজ করছি।