নীলক্ষেতের ফার্মেসিতে ঢাবির ওষুধ বিক্রি, মালিক আটক (ভিডিও)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ওষুধ বিক্রির দায়ে নীলক্ষেতের মামুন ফার্মেসির মালিককে আটক করা হয়েছে। সোমবার সকালে ওই ফার্মেসির মালিক মোহাম্মদ হানিফকে ঢাবির ওষুধসহ আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের ওষুধ নীলক্ষেতের একটি ফার্মেসিতে বিক্রি হচ্ছিল। এ খবর পাওয়ার পর আমরা অভিযুক্ত দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। এ বিষয়টির সাথে আর কারা জড়িত আছে কিনা আমরা তদন্ত করছি।
জানা যায়, শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নীলক্ষেতের মামুন ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে যান। তিনি দোকানদারকে পেটের ওষুধ দিতে বললে, জিফ্লক্স-৫০০ নামের ওষুধ দেন। যেগুলো প্রতিটি ১৫টাকা দামে বিক্রি হচ্ছিল। তিনি ওষুধগুলো খাওয়ার সময় খেয়াল করেন যে সেগুলোর গায়ে লেখা আছে ‘নট ফর সেল, ঢাকা ইউনিভার্সিটি’।
এ বিষয়টি জানাজানি হবার পর রবিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য তানবির হাসান সৈকত ফার্মেসিটিতে যান। তিনি ঢাবির ওষুধ বিক্রির সত্যতা দেখতে পান। এ সময় তিনি দোকানে এ ওষুধ কে বার কারা সরবরাহ করে জানতে চাইলে মামুন ফার্মেসির মালিক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল মালেক এ ওষুধ বদলিয়ে অন্য ওষুধ নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে গেলে ছাত্র-ছাত্রী ভাই-বোনরা জ্বর, সর্দি-কাশির ওষুধ ছাড়া কিছু পান না। অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ওষুধ বিক্রি করে দেওয়া হয়। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ফেসবুক গ্রুপে একটা খবর পায় যে জিফ্লক্স-৫০০ নামে একটি ওষুধ নীলক্ষেত মামুন ফার্মেসীতে বিক্রি করা হচ্ছে। আজ সকাল ১১টায় আমি ও সাংবাদিক কবির কানন দোকানে গিয়ে ওই ওষুধটি কিনতে চায়। দোকানদার আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলমারা ওষুধ দেন। আমরা তার কাছে জানতে চায় তিনি কোথায় পেয়েছেন। প্রথমে বলতে না চাইলেও দোকানদার পরে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল মালেকের কাছ থেকে তিনি এই ওষুধ কিনেছেন।
তিনি আরও জানান, পরে দোকানদারকে নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে যায়। সেখানকার ডাক্তার ও অফিসাররা প্রথমে ছাত্রদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। তারা বলেন, ছাত্ররা আইডি কার্ড না দেখিয়ে ওষুধ নেন। পরে অবশ্য তারা এই রকম ঘটনা ঘটে বলে স্বীকার করেন। মামুন ফার্মেসীর মালিক হানিফ ও অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল মালেককে নিয়ে আমরা প্রক্টর অফিসে যায়। প্রক্টর এই ঘটনা তদন্ত করে কারা এমন কাজ করে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছেন। অবৈধভাবে ওষুধ বিক্রির দায়ে দোকানদারকে থানায় দেওয়া হয়েছে। যিনি বিক্রি করেছেন তার বিরুদ্ধ তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল মালেক জানান, তিনি মেডিকেলের ডাক্তার ডা. আরিফুর রেজা সিকদারের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন করে ছয়পাতা ওষুধ নেন। তবে ডা. আরিফুর রেজা সিকদার জানান, তিনি কাউকে ছয়পাতা জিফ্লক্স ওষুধ প্রেসক্রাইব করেননি। অভিযুক্ত ড্রাইভার তখন ডা. মো সালাহউদ্দিন ও ডা. নূর মোহাম্মদের কাছ থেকে দুই পাতা ওষুধ প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে নেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলছে শিক্ষার্থীরা। শারমিন আকতার নামে এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে গিয়েছিলাম। আমি ডাক্তারকে রোগের কথা বলার আগেই তার সহকারী আমাকে কিছু জ্বরের ওষুধ লিখে দেন!
রতন দাশ নামে আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, সেখানে জ্বর আর সর্দির ওষুধ ছাড়া আর কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময় তারা বলেন যে ওষুধের স্টক শেষ হয়ে গেছে। বাইরের থেকে কিনে নেন।