মুক্তি মেলেনি তানভীরের, চাপা ক্ষোভ ঢাবি শিক্ষার্থীদের
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ মে ২০১৯, ০৪:০৪ PM , আপডেট: ০৩ মে ২০১৯, ০৫:০৮ PM
সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তানভীরকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। তিনি আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিসিএস প্রিলি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তুচ্ছ ঘটনায় তানভীরের প্রতি এ অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানান তার সহপাঠী ও স্বজনরা।
শুক্রবার তানভীরের স্বজন ও বন্ধুরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় মোটরসাইকেল চালিয়ে আত্নীয়ের বাড়ি যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এসময় গাড়ীতে থাকা ব্যক্তিরা তাকে ও তার মামা ফেরদৌসুল হককে শাহবাগ থানায় নিয়ে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
২০১২-১৩ সেশনের শহিদুল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তানভীর ৪০তম বিসিএসের পরীক্ষার্থী ছিলেন বলে জানান তার সহপাঠীরা। কিন্তু থানায় আটক হওয়ার কারণে আজ তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি। তানভীরকে শুক্রবার ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার জাসেদুল ইসলাম ঢাবি শিক্ষার্থী তানভীরের বিরুদ্ধে গতকাল রাতে মামলাটি করেন। যেসব ধারায় এ মামলা করা হয় সেগুলো হলো-১৮৬/৩৩২/৩৫৩/৪১৯ ও ৩৪। এসব ধারার মধ্যে ১৮৬ নম্বর ধারা হলো- সরকারি কাজে বাধা দেওয়া। ৩৩২ ধারা- সরকারি লোকদের আঘাত করা, ৪১৯ নম্বর ধারা প্রতারণা করা ও ৩৪ নম্বর ধারা হলো এসব করার জন্য পরস্পর যোগসাজশ করা ।
ঢাবি আব্দুল্লাহ হিল বাকী স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফেসবুক গ্রুপে লিখেন, ‘তানভীর ভাইকে ছাড়াতে আমরা ১৫-১৬জন শাহবাগ থানায় গেলাম। ডাকসু ভিপিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ৪৩ হাজার ঢাবিয়ানরা এখনো চুপ করে আছে এটা দেখেই অবাক হচ্ছি! পুলিশ তানভির ভাইকে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের মামলা দিয়ে কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছে আর্মির উপরমহলের নির্দেশে। বিসিএস পরীক্ষাটাও দিতে পারেনি। বিষয়টা জটিলতার দিকে গড়াচ্ছে, আমরা চুপ করে থাকবো?’
মাশকুল রাতুল নামের আরেকজন লিখেন, ‘ভাই দেশটাকে উর্দিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করার আগে ছাত্রদেরকেই মাথা তুলে দাড়াতে হবে।’
আরেক ঢাবি শিক্ষার্থী মো. শাকিল মিয়া লিখেন, ‘রাস্তাঘাটে এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্কের জেরে সেনাবাহিনীর দ্বারা এমন হয়রানি সত্যিই লজ্জাজনক। বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও বিসিএস প্রিলিমিনারিতে অংশগ্রহণ করতে পারে নি ভাইটি। এর দায় কে নিবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর প্রক্টর তেলবাজিতে সিদ্ধহস্ত হলেও শিক্ষার্থীদের বিপদে পাশে দাড়াঁতে পারে না।’
বাংলাদেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লাহ ফেসবুকে লিখেন, তবে কি সেনবাহিনীর কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আসহায়? সকালে গিয়েছিলাম শাহবাগ থানায়। ঢাবির ভূগোল বিভাগের তানভীরকে কোর্টে চালান করে দেয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল আর সেনাবাহিনীর গাড়ি থাক্কা লাগে। সাধারণ বাকবিতণ্ডা থেকে তানভীর কে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও লিখেন, ‘আজ তার ৪০ তম বিসিএস’র প্রিলি ছিলো। সহকারী প্রক্টর ও শহীদুল্লাহ্ হলের প্রভোস্ট শাহবাগ থানায় গিয়ে ফেরত এসেছে কাল রাতে। সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছে ঢাবি প্রশাসন। এমনটাই জানলাম শাহবাগ থানা থেকে। ঢাবি কি এতোই দুর্বল হয়ে গেছে! সবার আগে আমাদের পরিচয় আমরা সবাই ঢাবির ছাত্র। একজন বিপদে পড়লে ঢাবির সবাই এগিয়ে আসে এটাই ঢাবির বৈশিষ্ট্য। অস্তিত্ব আর আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কোন ছাড় নয়। তানভীরের উপর এই মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে তাকে মুক্ত করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী জানান, পুলিশের সাথে তাঁদের কথা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত-বিশ্লেষণ করছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই ছাত্র নির্দোষ হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।