গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে ডাকসু জিএসের বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে এর সাধারন সম্পাদক (জিএস) সকল সাংস্কৃতিক আয়োজনের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জিএসের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। এ ধরণের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাকে স্বেচ্ছাচারিতা বলে উল্লেখ করেছেন ডাকসুর সহ সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুর।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করে গবেষণা কার্যক্রম সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আরো প্রসারিত করার জন্য ডাকসুর পক্ষ থেকে জিএস গোলাম রব্বানীর স্বাক্ষর করা একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহশিক্ষা কার্যক্রমে ( যথা-বিতর্ক, নাটক, গান, নৃত্য, বক্তৃতা, আবৃত্তি ইত্যাদি) তত্ত্বাবধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সকল অংশীজনের সহায়তা কামনা করে। আপনারা ইতিমধ্যে জানেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান যেকোন অংশগ্রহণ এবং প্রতিযোগিতামূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রেরণে ডাকসু এ বিষয়ে একক এখতিয়ার রাখে।’
আরো বলা হয়েছে, ‘এ বিষয়ে ডাকসু সংশ্লিষ্ট সম্পাদকগণ অতি দ্রুত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। এর আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হয়ে যেকোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পূর্বে ডাকসুর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করা হল।’
অথচ গঠনতন্ত্রে এমন কোন নিয়ম নেই বলে জানা গেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, একক এখতিয়ার ডাকসুকে দেওয়া হয়নি। কোথাও বলা নেই যে, ডাকসুর কাছে জানিয়ে কোনো প্রতিযোগিতায় যেতে হবে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘If possible, send representatives to Inter-University debates and educational conferences.’ অর্থ্যাৎ সম্ভব হলে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক ও শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারবে ডাকসু। কিন্তু কোথাও বলা নেই, এ ধরণের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র ডাকসু প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যদি এই নিয়ম গঠনতন্ত্রে থাকত তাহলে সাধারন শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ত। ডাকসুর একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পেলে, যে কেউ যে কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না। ডাকসু যাকে মনোনয়ন দেবে, কেবল সে-ই মনোনয়ন পাবে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ডাকসুর জিএস গোলাম রব্বানী। বিয়য়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। সবার প্রশ্ন, গঠনতন্ত্রে এমন কোন নীতিমালা না থাকা সত্ত্বেও জিএস এমন মনগড়া বিজ্ঞপ্তি কীভাবে দিলেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এই বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে কোন আলোচনা ডাকসুতে হয়নি। টিএসসির সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য এটা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এ ব্যাপারে ডাকসুতে কোন আলোচনা হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডাকসু বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সহযোগিতা করবে। কিন্তু এখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কিছু নেই। ডাকসুর অনুমতি নিয়ে যেতে হবে, এটি আসলে তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া কিছু নয়।’
তবে বিষয়টি সম্পর্কে ডাকসুর এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) সাদ্দাম হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছেন, ‘ডাকসুর সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, তা অবশ্যই আলোচনা সাপেক্ষ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি নিয়ে যদি কারও কোন কথা থাকে তাহলে সেটি নিয়ে তো আলোচনা করার সুযোগ আছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ টিএসসির সংগঠনগুলোর স্বাধীনতা সক্রিয়তাকে বিশ্বাস করি। টিএসসির সংগঠনগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ নয়, বিকাশ করা আমাদের দায়িত্ব।’
এ ব্যাপারে ডাকসুর জিএস গোলাম রব্বানীর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।