শাহবাগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে (ভিডিও)
বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগসহ ছয় দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পুলিশি নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক ছাত্রীকে পুলিশ কর্তৃক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অন্তত দু‘জন গুরুতর আহত হলে তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার। তিনি বলেছেন, ‘সবাই আমাদের ভাই-বোন। এখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আন্দোলনকারীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিতে শাহবাগে অবস্থান নেন। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে, ব্যানার ছিড়ে ফেলে এবং মাইক কেড়ে নেয়। এসময় কয়েকজন ছাত্রও পুলিশের পিটুনিতে আহত হন।
একপর্যায়ে মেয়েরা সামনে আসলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত করা হয়। এমনকি একজন ছাত্রীকে দু‘জন পুরুষ পুলিশ গায়ে হাত দিয়ে লাঞ্ছিত করে বলে তারা অভিযোগ করেন। এছাড়া তাদের ব্যবহার করা সাদা ছড়িও কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।
ঘটনা শুনে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুক হোসেনসহ অনেকেই ছুটে যান। এসময় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তারা জানান।
ভূক্তভোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রী (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ) সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘তারা বলে মামলা করে দেবে, ছবি তুলে রাখতে বলে। পুলিশ আমার ওপর হামলা করে, থাপ্পড়ও মেরেছে। আমি একটা মেয়ে, আমাকে কিভাবে নির্যাতন করেছে। একটা পুলিশ কিভাবে ধরেছে, আমি এর বিচার চাই। পুরুষ পুলিশ মেরেছে, কারণ ওখানে কোন নারী পুলিশ ছিল না। এখন নারী পুলিশ নিয়ে এসে নাটক সাজানোর চেষ্টা করছে।’
পরে নুরুল হক নুর বলেন, ‘তাদের এই দাবি যৌক্তিক। এখানে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তারা হামলার শিকার হয়েছেন। আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
তিনি বলেছেন, ‘সব সময়ই দেখা যায়, কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ থাকে, যারা এ ধরণের ঘটনাগুলো ঘটায়। ওই ঘটনার সময়কার কোন ছবি কারও নিকট থাকলে তা দিতে বলেছি। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।’
তবে আন্দোলনকারীরা জানান, তারা সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ঠিকমতো ফোন ব্যবহার করতে পারেন না। এ কারণে ছবি তুলতে পারেননি। এসময় হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।
তাদের আন্দোলনের ব্যাপারে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘শাহবাগ মোড় এখন খুবই সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে। যে কারণে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিতে প্রতিনিধিদল নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। তবে তারা তা না মেনে এগিয়ে যেতে চাইলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।’ তবে কেউ ওই ধরণের কাজে জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
ডাকসুর ভিপি, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা এবং পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে আন্দোলনকারীদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী বরাবর তাদের স্মারকলিপি দিতে যান। কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
তাদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- নবম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব ধরণের চাকরিতে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগ দেওয়া; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার আলোকে পিএসসির পরীক্ষা নেওয়া; মাসে ১০ হাজার টাকা করে বেকার ভাতা দেওয়া; অতিমাত্রায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া; দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিবছর একটি করে বিশেষ নিয়োগের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এছাড়া ৪০তম বিসিএসে তাদের দাবি অনুযায়ী শ্রুতিলেখক দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।