২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৩৩

অলিম্পিয়াডে বিজয়ী চার শিক্ষার্থী যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া

  © সংগৃহীত

বাঙালিরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আজকের ভাষাকে কেন্দ্র করেই জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। আর সেই ভাষাকে নিয়েই এবার অনুষ্ঠিত হলো ‘বিএলএস-সমকাল ভাষাবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড’।

প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর চোখেমুখে আবেগ ও উচ্ছ্বাসের মিশেলে এক ভিন্ন অনুভূতি। সঙ্গে ছিল অজানাকে নিয়ে জানার অনন্ত তৃষ্ণা। পরীক্ষা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হওয়া মাত্রই যেন মুখে খই ফুটে অংশগ্রহণকারীদের। কেন বাগধারাকে বাংলা ভাষার ঐতিহ্য বলা হয়? বর্ণমালায় তিনটা ‘শ’ কেন? কিভাবে বাংলা ভাষায় বিদেশি ভাসা যুক্ত হলো? ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন আর প্রশ্ন। আর এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে প্যানেলিষ্টদের।

শনিবার বাংলাদেশ লিঙ্গুয়েস্টিক সোসাইটি (বিএলএস) ও সমকালের যৌথ আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ভাষাবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড-২০১৯-এর জাতীয় পর্ব। এতে অংশ নেয় ২৫টি আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডের বিজয়ী প্রায় ২০০ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। যার মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয়েছেন ১৫ জন।

এর মধ্যে প্রথম চারজন আগামী ২৮ জুলাই থেকে ২ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক ভাষাবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তারা হলেন- প্রথম ইশরাত ইভি, দ্বিতীয় ইফতেখার হোসেন ইফতি, তৃতীয় সৈয়দ নাহিয়ান ফেরদৌস ও চতুর্থ মালিহা মাসুদ চৌধুরী।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

বিএলএস সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বিএলএসের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সমকালের সহকারী সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাওহীদা জাহান শান্তা।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ভাষা মানুষের। মানুষ হওয়ার স্বপ্ন সারাজীবন দেখি। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ হওয়াই একমাত্র কাজ। প্রতিটি জ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞান জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষার সঙ্গেও রয়েছে বিজ্ঞানের সম্পর্ক। আর ভাষাবিজ্ঞানের সঙ্গে বাংলা একাডেমি জড়িত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কাজ আটটি বিভাগে সম্পন্ন হয় বাংলা একাডেমিতে। ভবিষ্যতে ভাষাবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সঙ্গে বাংলা একাডেমি যুক্ত থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশে কোনো অতিথি এলে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ দেখতে যান। বাংলা ভাষার বহুমুখী চর্চাকেন্দ্র হিসেবে আগামীতে বাংলা একাডেমিও পরিদর্শন তালিকায় থাকা উচিত।

প্রতিযোগীদের উদ্দেশে মুস্তাফিজ শফি বলেন, তোমাদের হাতে স্বপ্নের বাংলাদেশ। তোমরা গড়ে উঠলে সমৃদ্ধ দেশ পাব। শুধু দেশ নয়, তোমাদের হাত ধরে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই আমরা কাজ করছি। নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই এগিয়ে যেতে হবে তোমাদের।

এর আগে সকালে জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী পর্ব। সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএলএসের সভাপতি হাকিম আরিফ, সমকালের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক জিয়া হাসান, সহসম্পাদক গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।

এরপর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ভাষা নিয়ে আঞ্চলিক রম্য বিতর্কে (বারোয়ারি) অংশ নেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যরা। ঢাকা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, যশোর ও কলকাতার আঞ্চলিক ভাষার এই বিতর্ক দারুণ উপভোগ করেন অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগী, অতিথি ও অভিভাবকরা।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১৫ জনের মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন সারাফ তাসনীম, ষষ্ঠ আল শাহরিয়ার রবিন, সপ্তম স্বপ্নীল দেব শ্রাবণ, অষ্টম রিদওয়ান নবীন, নবম সুমাইয়া নিয়ান্তা মারিয়াম, দশম তানভীর রহমান খান, ১১তম সাফকাত শরীফ সাদি, ১২তম জয়ন্তী পাল, ১৩তম এসএম সিন্ধির ইসলাম, ১৪তম ইমরান নাজিম ও ১৫তম দুর্জয় সাহা।

গত ১৬ মার্চ শুরু হয় ভাষাবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের ষষ্ঠ আসর। সারাদেশের ২৫টি অঞ্চল থেকে বিজয়ীদের নিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পর্বের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা।