স্টল খোলার অনুমতি মেলেনি, নষ্ট খাবারের দাম চাইলেন ফারজানা
মামার অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির গেইটে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসিয়েছিলেন ফারজানা সুলতানা। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তিনি।কিন্তু গতকাল সেই ছাত্রীকে স্টল বসাতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুধু তাই নয়, দোকান বসালে ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে এমন হুমকিও দিয়েছেন এক সহকারী প্রক্টর।
বিষয়টি নিয়ে আজ প্রক্টরের সাথে দেখা করার কথা ছিল ওই ছাত্রীর। কিন্তু প্রক্টর অফিস থেকে সাড়া না পাওয়ায় দেখা করতে যাননি তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারজানা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, স্টল বসানোর ব্যাপারে প্রক্টর স্যার ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। অথচ গতকালই তিনি ফোন করে ‘অনুমতির সিদ্ধান্ত’ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। তাছাড়া আজ দেখা করার ব্যাপারেও প্রক্টর অফিস থেকে কিছু জানানো হয়নি। তাই যাওয়া হয়নি। তিনি বলেন, যেহেতু প্রশাসনের পক্ষ অনুমতি মেলেনি; তাই চাইলেও স্টল বসানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে গতকাল যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হয়েছে; তার দাম যেন প্রক্টর স্যার দিয়ে দেন। সেটাই তার কাছে অনুরোধ থাকলো।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে খাবার দোকান নিয়ে বিভিন্ন কথা তুলে ধরেন ফারজানা। লিখেন, প্রক্টর আমাকে বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কেউই এমন খাবার বিক্রি করেনি কখনও, তোমার সাহস হল কি করে?’
তার ভাষায়, ‘আজ মঙ্গলবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে কখন দিন আর কখন রাত, কয়টা বাজে, কয় তারিখ, কি বার কিছুরই হিসেব রাখা হয় না কদিন। আমি জীবনে যত খাবার নষ্ট করেছি তা মাপলে এক প্লেট হবে কিনা আল্লাহ ভাল জানেন! অথচ প্রক্টরের আমি দেখছি, তুমি সময় বেঁধে দিতে পার না বলার পর সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থেকে আর রাতে হলে মেয়েরা না জানায় সালাদ আর এক গামলা ভাত আমার নষ্ট হল! এ দায়ভার কার?
আমি দুই বছর আগে থেকে পথশিশুদের পড়াই। উনি অনুমতি দিবেন না তা এক ঘণ্টার মধ্যে জানালেন না কেন? আমি সব খাবার বাচ্চাদের দিয়ে দিতাম, কত ভাল একটা কাজ হত!মন মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে আমার!
ঢাকা মেডিকেল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য ফ্রিজ আছে।আর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের নিরাপত্তা সেটাই নাই!এখানে ক্যাম্পাসে পাগল এসে মেয়ে শিক্ষার্থীকে জড়িয়ে ধরে, বহিরাগত এসে মেয়েদের সাথে প্রাঙ্ক-এর নামে অশ্লীল হেনস্থা করে, পহেলা বৈশাখে শ্লীলতাহানি হয়, বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেও প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দূরেই থাকল। মেরুন্ডহীনগুলো পত্রিকায় বা খবরে একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করার সাহস রাখে না; আবার আমাকে ফোনে ক্ষমতার বড়াই, টাকার গরম দেখিয়ে আমার সাহস পরিমাপ করতে আসে!!
আমাকে প্রশ্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কেউই এমন খাবার বিক্রি করেনি কখনও, তোমার সাহস হল কি করে? তোমার মত যুক্তিবাদী স্টুডেন্ট এই চেয়ারে বসার পর একটাও দেখিনি!সব নিয়ে কথা বলতে আস কেন, এখন তোমার মামার জন্য কি লাগবে?
আরে বাবা আমার মামা প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও মাটির বাড়িতে বসবাস করেও কারও কাছে সাহায্য চায় নি সেখানে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইয়ারের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হয়ে হাত পাততে যাব মামার জন্য ভাবলেন কি করে?
আসেন আমার ছাত্রত্ব বাতিল করেন, এমন নাম ভাঙ্গিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি কখনও পড়ার স্বপ্নও দেখিনি, এখন আরও চাই না। আমার পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দরকার, কারণ তারা বাংলাদেশের আর সব মধ্যম মানের চিন্তাধারার অধিকারীদের মত ভাবে বিএসএস বা পিএইচডি ছাড়া আমি মেধাবী নই! আমার এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট না হলেও দিন কেটে যাবে! কারণ সার্টিফিকেট ধুয়ে পানিও খাব না, কবরেও নিয়ে যেতে পারব না।
এই যে মাননীয় স্পিকাররা, এত ক্ষমতা, টাকা বা বিদ্যার বড়াই দয়া করে দেখিয়েন না। মরলে কিন্তু আপনাদের আমাদের কবর সমানই হবে, সাড়ে তিন হাতের বেশি বা দুনিয়ার এত পাওয়ার নিয়ে যেতে পারবেন না। আর একটা কথা মাথায় রাখবেন, জ্ঞান ভারে মানুষ নত হয়, উগ্র নয়। আর ফাঁটা কলসি বাজে বেশি।
প্রসঙ্গত, ফারজানা সুলতানার অসুস্থ মামাকে নিম্নোক্ত উপায়ে সাহায্য করা যাবে। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: ফারজানা সুলতানা, ৪র্থ বর্ষ, আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিকাশ:01739893504, 01747712659, 01995326303
রকেট: 015213191095, 019953263030
ব্যাংক একাউন্ট: Md.Shafiqul Islam.
Acc no : 118.101.0240626 Bank : D.B.B.L.