পহেলা বৈশাখের উৎসবে বর্ণিল ঢাবি ক্যাম্পাস
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন নব উল্লাসে মেতে উঠেছে কোটি বাঙালির হৃদয়। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তাই আয়োজনের যেন কমতি নেই কোথাও। আর বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসবে যেন নেতৃত্ব দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’ প্রতিপাদ্য ও মর্মবাণী ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ-১৪২৬। আজ রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে বাংলা নববর্ষের বর্ণিল আকর্ষণ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
শোভাযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সম্মিলনে শোভাযাত্রাটি শাহ্বাগ মোড় হয়ে টিএসসি ঘুরে চারুকলায় এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অনেক বিদেশি অতিথিও অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে ‘এসো হে বৈশাখ’ শিরোনামে নতুন বছরের সমৃদ্ধি কামনায় সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের উদ্যোগে কলাভবনের সামনে ঐতিহাসিক বটতলায় সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণ উৎসবের শুরু হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এসময় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, সংগীত বিভাগের চেয়ারপার্সন টুম্পা সমদ্দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ উদ্বোধনের প্রাক্কালে ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ বাঙালির আবহমান কালের সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক উৎসব। এর মধ্য দিয়ে আমরা অনুভব করি উদার, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা।’
তিনি বলেন, ‘এই উৎসবের অসাম্প্রদায়িক, উদার ও মানবিক মূল্যবোধের চেতনা সারাদেশের মানুষের মধ্যে বিরাজমান থাকুক। এটিই হোক আমাদের বর্ষবরণের মূল অঙ্গীকার। বর্ষবরণ শুধু ঐতিহ্য রক্ষার অনুষ্ঠান নয়। এটি আমাদের মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হওয়ারও প্রেরণা দেয়।’
উপাচার্য আরো বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, ‘বিশ্বের বহু দেশের মানুষ নববর্ষের এই বর্ণিল উৎসব উদ্যাপন করছে। পহেলা বৈশাখ হচ্ছে আমাদের পথ চলার একটি সহায়ক শক্তি। নতুন প্রাণের উজ্জ্বীবিত এই শক্তিতে আমাদের মানবিক ও উদারনৈতিক মূল্যবোধ আরও বিকশিত হোক। নতুন বছর সবার জীবনে সুখ, শান্তি, মঙ্গল ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে বর্ষবরণ উদ্যাপিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এসব আয়োজনের মধ্যে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে নাটমন্ডলে নাট্য-অনুষ্ঠান, সংগীতানুষ্ঠান ও হিজড়া সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ঐতিহাসিক আমতলার মুক্তমঞ্চে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে পরিবেশিত হয় শিশুদের বৈশাখ বরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মাহফুজা খানম।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের উদ্যোগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিষাদও ভর করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে। আজ নামী শিল্পীদের অংশগ্রহণে কনসার্ট হওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের কোন্দলের কারণে তা হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীাদের অনেকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।