১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৩০

নুসরাত হত্যাকাণ্ড যেন সাগর-রুনি বা তনুর মতো গহবরে নিক্ষিপ্ত না হয়

  © সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী ও চলমান আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নুসরাত জাহান রাফিকে নৃসংশভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নুসরাতের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যেন কোনোভাবেই সাগর-রুনি বা তনু হত্যাকাণ্ডের মতো বিচারের ধীরগতির গহবরে নিক্ষিপ্ত না হয় সে আহবানও জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহবান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে শিক্ষকেরা বলেছেন, ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও চলমান আলিম পরীক্ষায় অংশ নেয়া নুসরাত জাহান রাফিকে পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখেই তার জীবনের সমাপ্তি টানতে হয়েছে। সম্ভাবনাময়ী নুসরাতকে মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক এক পরিণতি বরণ করে নশ্বর এ পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে। ইহজাগতিক মোহ, ঐন্দ্রজালিক লালসা আর প্রবৃত্তির বাসনার সম্মিলিত আঘাতে কৈশোরেই নুসরাতকে চিরবিদায় নিতে হল। আধুনিক বিশ্ব, স্বাধীন দেশ আর সুশীল সমাজে এমনটি কেউ কখনো প্রত্যাশা করেনি।

তারা বলেন, এক নুসরাতের বিদায়ে দেশ, সমাজ ও সভ্যতা আজ হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন। দেশের আপামর ব্যবস্থা বিশেষ করে মানুষের শিক্ষা, ধর্ম ও সংস্কৃতিমনষ্কতার অসারতাই যেন জানান দিয়ে গেল নুসরাত। নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় কঠোর অনুশীলনের পাদপীঠ মাদ্রাসার নিরাপদ চৌহদ্দি আজ নুসরাতের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হল। ইসলামে নারীর যে ন্যূনতম অধিকার তা তো দূরে থাক, খোদ ধর্মচর্চার কেন্দ্রেই একজন কিশোরী বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও হারালো। শিক্ষকেরা এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করেন।

দেশের আলেম সমাজের নিকট আহবান জানিয়ে তারা বলেন, ধর্মীয় পরিমন্ডল থেকে নুসরাতের বিয়োগান্ত ঘটনার পূর্বাপর আরো অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার খবরাখবর নিত্যদিন প্রকাশিত হচ্ছে। ইসলামি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন এসব অনাকাক্ষিত ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে আপনারা এগুলোর সঠিক তদন্ত করুন। দেশের মাদ্রাসাগুলোর দিকে নজর দিন, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক করণীয় নির্ধারণ করুন। দেশের সাধারণ মানুষের মনে ধর্ম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়াসী হোন।

তারা বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকে সমগ্র বিশ্বে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার পরিচালনার মূল চালিকাশক্তির অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নারীরা নিয়োজিত রয়েছেন এবং তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এমন একটি দেশে নারীদের প্রতি এহেন বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা জাতিগতভাবে আমাদের সকল চিন্তা ও চেতনার শক্তিকে থমকে দেয়; এ থেকে অবশ্যই আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে।

শিক্ষকেরা বলেন, ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটিকে যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে দৃষ্টান্তমূলক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে শুরু করে দেশের আপামর জনগোষ্ঠী ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আপোসহীন এবং নুসরাতের প্রাণনাশের মর্মান্তিকতায় শুধুমাত্র শোকস্তব্ধই নয় বরং এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অমানুষদের যথোপযুক্ত শাস্তি দেখতেও বদ্ধপরিকর।

এসময় শিক্ষকেরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, খেয়াল রাখা জরুরি যে, কোনো অপরাধী সে যতো প্রভাবশালীই হোক না কেন, যে দলের বা মতেরই হোক না কেন সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে নরপশুদের কঠিন শাস্তি বিধানে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। এটি যেন কোনোভাবেই সাগর-রুনি বা তনু হত্যাকাণ্ডের মতো বিচারের ধীরগতির গহবরে নিক্ষিপ্ত না হয়। সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, অপরাধীর শাস্তি বিধান করা ও সমাজকে কলুষমুক্ত রাখা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এক্ষেত্রে তার আশু বাস্তবায়ন কাম্য বলেও উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।