এস এম হলে হামলা
সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিচারের প্রতিশ্রুতি ঢাবি ভিসির
*তদন্ত কমিটি বললেন সম্ভব নয় *কমিটিকে প্রমাণ দিলেন ভুক্তভোগীরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:০৬ PM , আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৮ PM
ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ফরিদ নামের এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার বিচার চাইতে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরসহ অন্যদের উপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবারের মধ্যে অভিযুক্তদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যথাসময়ের মধ্যে বিচার না পাওয়ায় মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভিপি নূর। এসময় পুনরায় সাত কার্যদিবস পর্যন্ত সময় নেয়া হয়। যদিও সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ।
জানা যায়, গত সপ্তাহের সোমবার রাতে এস এম হল সংসদের জিএস প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মো. ফরিদ হোসেনকে জোর করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় ছাত্রলীগ। রুমে ইয়াবা ঢুকিয়ে হল থেকে বেরও করে দেওয়া হয়। এরপর নির্বাচনের ২০ দিন পার হলেও গত সপ্তাহের সোমবার ‘হলে থাকার অভিযোগে’ তাঁকে রড ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার, হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ওয়াসিফ হাসান পিয়াস, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, সানাউল্লাহ সায়েম ও সাব্বির তাকে রুম থেকে বের করে হলের ডাইনিং রুমে মারধর করে রক্তাক্ত করে। এতে তার শরীরে ৩২টি সেলাই দিতে হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেন তিনি। এই ঘটনার বিচার চাইতে যান গত সপ্তাহের মঙ্গলবার এসএম হলে যান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর, সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, শামসুন্নাহার হলের ভিপি তাসনিম আফরোজ ইমি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খান, ফারুখ হোসেনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তারা যখন হলের গেইটে পৌঁছান তখন তাদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি বেনজিরের শরীরে লাথি মারে এক ছাত্রলীগ কর্মী। একই সময় ভিপি ইমির গায়েও হাত তোলা হয়। ডিম হামলা করা হয় শিক্ষার্থীদের উপর।
অন্যদিকে, ভিপি নূর, আখতার হোসেন, রাশেদ খান, ফারুখ হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে হল প্রাধ্যক্ষের রুমে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগের হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, হল সংসদের ভিপি মুজাহিদ কামাল, জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার, সাহিত্য সম্পাদক আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদসহ হল সংসদের নেতাকর্মীরা। এসময় তাদেরকে লাঞ্ছনা এবং বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এ ঘটনার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে আন্দোলনকারীরা। ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সাক্ষাৎ না পাওয়ায় তারা সারারাত অবস্থান করে সেখানে। পরের দিন বুধবার সকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তিনি হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে আগামী সোমবারের মধ্যে আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা।
সোমবারের মধ্যে কোন বিচার না পাওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নূর। এসময় তিনি হামলার ঘটনার জড়িতদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তখন ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিতদের পরিচয় ডকুমেন্ট আকারে ভিসির নিকট জমা দেন তিনি। এসময় ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এরপরেও যদি বিচার না করা হয় তবে আন্দোলনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক নূর বলেন, আমরা যথাসময়ে ঘটনার বিচার না পাওয়ায় ভিসির সঙ্গে দেখা করি। এসময় আমরা ঘটনার বিভিন্ন ডকুমেন্ট জমা দেই। তিনি তদন্ত কমিটি হওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা বলেছি, এরপরেও যদি সময় নেয়া হয় তবে আমরা আন্দোলন করব। তিনি আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন।
তবে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ হওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে মাত্র একটি মিটিং হয়েছে। আরও প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে। এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, হল কমিটি তদন্ত করছে। ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর যারা অভিযুক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো দেখুন: হামলাকারীদের বহিষ্কারে ৫ দিন সময় দিলেন নুর (ভিডিও)