ডাকসুর ফল বাতিল চেয়ে রিট করছেন রাশেদ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল ও পুনরায় তফসিলের দাবি তিন সপ্তাহ পরও থামেনি। একদিকে ছাত্রদল অন্যদিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন, সেই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ- সবাই এই নির্বাচন বাতিলের দাবি নিয়ে সরব। যদিও পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত। তবে এরই মধ্যে ফল বাতিল চেয়ে রিট করা যায় কিনা- তা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। সে ক্ষেত্রে একমাত্র অভিযোগকারী রাশেদই এই রিট করবেন বলে সূত্রের তথ্য।
জানতে চাইলে ডাকসুর জিএস প্রার্থী ও মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন সোমবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রিটের বিষয়টি নির্ভর করছে অভিযোগ তদন্তকারী কমিটি কী ধরণের সিদ্ধান্ত দেয়- তার উপর। রাশেদের ভাষ্য, তদন্ত কমিটি যদি সুষ্ঠুভাবে আমার অভিযোগুলো দেখভাল করে এবং এ বিষয়ে যৌক্তিক সমধান দেয়; তাহলে তো রিটের প্রশ্ন আসে না। এর ভিন্ন কিছু হলে সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব, আশা করি- সেখান থেকেই রিটের সিদ্ধান্ত আসবে।
রিটের বিষয়ে ভিপির সম্মতি আছে কিনা জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, তিনি এখনো আমাদের তথা সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করেননি। আশা করা যায়- এ বিষয়ে সঙ্গে থাকবেন। তবে অভিযোগ যেহেতু ব্যক্তিভিত্তিক এবং আমি একা অভিযোগ দায়ের করেছি। তাই সামগ্রিক বিষয়গুলো আমাকেই আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ডাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘রিটের বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা বসব। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।’
রাশেদ ও নুরের মত প্রায় একই কথা জানিয়েছেন পরিষদের আরেক নেতা ও ডাকসুতে যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রার্থীতা করা ফারুক হাসান। রোববার তিনি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রিটের বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মত দেন। তবে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান।
এর আগে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য-সচিব অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছিলেন, ‘রাশেদ খাঁন নামে ওই প্রার্থীর অভিযোগ কতটুকু সত্য, তা যাচাই-বাছাই করা হবে। অভিযোগকারী রাশেদের ভোট পুর্নগণনা ব্যাপারে তিনি বলেন, এ দাবিটা অবাস্তব। এটা মেনে নেয়া সম্ভব না।’
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম বিষয়ে রিট কিংবা আদালতে যাওয়া যাবে কিনা- এসব বিষয়ে গঠনতন্ত্রের ৮ এর (এম) ধারায় বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোন অভিযোগ ফলাফল প্রকাশের সুস্পষ্ট তিন দিনের মধ্যে সভাপতির নিকট উপস্থাপন করা যাবে এবং সভাপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। কোন আইনি আদালতের রায় এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবে না।’ সে হিসেবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়া যাবে কিনা এবং গেলে আদৌ তা কাজে দেবে কিনা- এ বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের।
তথ্যমতে, গত ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের পর একটি প্যানেল বাদে বাকি সব প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ চায়। তবে অধিকাংশ প্যানেল এবং প্রার্থীই অভিযোগ জমা না দিয়ে বরং পুরো প্রশাসনকে দায়ী করে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেরই পদত্যাগ দাবি করেন। তবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে জিএস পদপ্রার্থী মুহম্মদ রাশেদ খাঁন প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করলেও তদন্ত কমিটির কাছে নির্বাচনের দিন নিজের চোখে দেখা ২০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জমা দেন। যার প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির সদস্যরা রোববার দুপুর ১২টা থেকে ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এসব অভিযোগের বিষয়ে তাকে জেরা করেন।
দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে রাশেদ খাঁন অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য শেষ করে বের হয়ে বলেন, ‘কৃত্রিম লাইন সৃষ্টি করা, ভোট দিতে বাধা দেয়া, লাইনে বসে লুডু খেলা, অধিকাংশ হলেই অনিয়ম ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আমার অভিজ্ঞতা এবং তথ্য-প্রমাণের আলোকে তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। এছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা, সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা, প্রার্থীর এজেন্ট থাকতে না দিয়ে অনিয়মের সুযোগ করে দেয়া, ভোট গণনার সময়ও সাংবাদিকদের থাকতে না দেয়া, অধিকাংশ প্যানেলের আপত্তি সত্ত্বেও আগের রাতে ব্যালট পাঠানো, বহিরাগত এনে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়া, জালভোট প্রদান করা, আমাদেরসহ বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা করা, ভোট দেয়ার পর হাতে চিহ্ন হিসেবে কালি না লাগানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছি। এছাড়া পুনরায় ডাকসু নির্বাচন দেয়ার দাবিও জানিয়েছি।’
রাশেদ খাঁনকে জেরার বিষয়ে তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। তবে ওই কমিটির একজন সদস্য নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের কাজ তদন্ত করে এবং প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে একটি পর্যালোচনা কর্তৃপক্ষের সামনে পেশ করা। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’