ফের ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ঢাবি ভিসির কার্যালয় অবরোধ

ফের ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান আন্দোলনকারীদের
ফের ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান আন্দোলনকারীদের  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে এবং ফের নির্বাচনের দাবি ভিসির কার্যালয় অবরোধ করে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে কোটা সংস্কার আন্দোলন, বাম জোট এবং স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকরা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও চলছে।

নির্বাচন বাতিল; পুনঃতফসিল ঘোষণা; উপাচার্যের পদত্যাগ; মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে সকালে নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলোর প্রার্থী ও সমর্থকরা সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। সেখান থেকে বের করা একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভিসির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে স্বতন্ত্র জোট থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অরণি সেমন্তি খান বলেন, ‘স্যার বলেছিলেন, আমাদের লিখিত অভিযোগ দিতে।আমরা দিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমরা তিনদিনের সময় দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা এখন ভিসি স্যারের কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নিয়েছি। স্যার আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’

কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন, ডাকসুর জিএস প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান, প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদী ছাত্র ঐক্যের সম্মলিত জোটের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির প্রমুখসহ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।

বেনজির বলেন, ‘আমরা ডাকসু নির্বাচনকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। একটি স্বচ্ছ নির্বাচন সবাই আশা করেছিলাম। পাচঁটি প্যানেলের দাবি ছিল, গেস্টরুম, গণরুমে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। কিন্তু কোন আশাই পূরণ হয়নি। এজন্য আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। গণতান্ত্রিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে।’

আসিফ বলেন, ‘সারাদেশের মানুষ জানে, ১১ তারিখের নির্বাচন কারচুপি হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন আমাদের প্রমাণ দিতে বলে। এখানে প্রমান দেওয়ার কিছু নাই।’

রবিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা।

আন্দোলনকারীরা জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আল্টিমেটাম শনিবার শেষ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের সাড়া না পাওয়ায় ফের পাঁচ দফা দাবিতে আজ ক্লাস বর্জন ও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

নির্বাচনে অনিয়মের কথা উল্লেখ করে ভিপি নুরুলহক নুর বলেন, ‘১১ মার্চের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর যে নির্বাচন হয়েছে তার মাধ্যমে প্রশাসন কালিমা লেপে দিয়েছে। আমরা বলেছি, পুনঃনির্বাচন দিতে হবে। যারা এই নির্বাচনের সাথে জড়িত তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ‘গত ১১ মার্চ বহুল প্রতিক্ষিত যে ডাকসুর নির্বাচন হয়েছে তাতে সাধারণ ছাত্রদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলিত হয়নি। নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল, সেই সংকট থেকে উত্তরনের একটি মাধ্যম হিসাবে ডাকসু নির্বাচনকে রোল মডেল হিসাবে উপস্থাপন করা যেত। কিন্তু ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম কারচুপি প্রতীয়মান হয়েছে। মৈত্রী হলে ক্রস দেওয়া ব্যালট, রোকেয়া হলে ট্রাঙ্ক ভর্তি ব্যালট উদ্ধার করা হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্রের ধারা, মর্যাদা ও সম্মানকে অক্ষুন্ন রাখতে এই নির্বাচনকে প্রশ্নের উর্দ্ধে রেখে শিক্ষার্থীদের মতামতের দাবির আলোকে ১১মার্চের এই বিতর্কিত নির্বাচন বাতিল করে ফের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। 

এর আগে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে রবিবার দুপুর ১টায় মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন প্রগতিশীল ছাত্রজোট থেকে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর জিএস প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আমরা বিভক্ত হয়ে গেছি কি না? আমরা পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করেছিলাম, আমরা একই অবস্থানে আছি।


সর্বশেষ সংবাদ