প্রার্থীদের ‘পোলিং এজেন্ট’ ছাড়াই ডাকসু নির্বাচন!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে শেষ মুহুর্তে প্রচারণা। সকাল থেকে রাত অবধি চলা বিরামহীন এ প্রচারে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি প্রার্থীরা। আশ্বাস দিচ্ছেন ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারা ফিরয়ে এনে বিশ্বমানের ক্যাম্পাস গড়ে তোলার। তবে ভোটের দু’দিন আগেও প্যানেল ও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দেয়া ‘পোলিং এজেন্ট’ ইস্যু সুরাহা না হওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন অনেকে।
অধিকাংশ প্রার্থী বলছেন, তারা পোলিং এজেন্ট প্রস্তুত রেখেছেন। কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। শুধু তাই নয়, পোলিং এজেন্ট নেবে কি নেবে না- এ ক্ষেত্রেও তাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট নয়।তবে রবিবার বিকেলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ‘নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট থাকছে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হলের শিক্ষকরাই পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
জানতে চাইলে জহুরুল হক হলের চিফ রিটানিং অফিসার অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ভোট কেন্দ্রের বুথে পোলিং এজেন্ট রাখার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট হলের শিক্ষকরা পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে অবশ্য হলটির প্রোভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছিলেন, পোলিং এজেন্ট নয়, প্যানেলগুলোর পক্ষ থেকে একজন করে প্রতিনিধি রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে। যাদেরকে বুথে না; ভোটকেন্দ্রে রাখা হতে পারে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
আর নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. এস. এম. মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে কারা প্রবেশ করতে পারবে কিংবা কারা পারবে না; তার সবকিছুই আচরণবিধিতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানেই এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। ব্যালট বক্স পাঠানোর ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসার বলেন, এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে হল প্রোভেস্টরা যখন তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ব্যালট বক্স চাইবেন তখন দেয়া হবে।
তথ্যমতে, নির্বাচনী আচরণবিধির ১১ এর (খ) ধারায় আছে, ‘নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাঁদের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবেন।’
জানতে চাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী ফারুক হোসেন শুক্রবার বলেন, পোলিং এজেন্ট ঠিক করার কাছ চলছে। শনিবার প্রশাসনের কাছে একটা তালিকা পাঠাব। যদিও প্রশাসন থেকে আমাদের এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি।
বাম সংগঠনগুলোর জোট ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং ছাত্র ঐক্য’র ভিপিপ্রার্থী (সহ-সভাপতি) ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, আমাদের পোলিং এজেন্ট প্রস্তুত। আমরা প্রশাসনের কাছে পোলিং এজেন্টের বিষয়ে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন থেকে কোন সাড়া পাচ্ছি না।
স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী ও ঢাবি সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি এ. এম. আর. আসিফুর রহমান (শুক্রবার) বলেন, পোলিং এজেন্টের বিষয়ে প্রশাসনের সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সব হলগুলোতে আমার এজেন্ট প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট রাখার বিধান থাকতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে ঢাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। শুক্রবার ঢাবি শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট রাখার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো স্পষ্ট বক্তব্য প্রকাশ করেনি। তারা বলছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণরত দলের নিজস্ব পোলিং এজেন্ট মোতায়েন করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। অন্যথায় এই নির্বাচনের ফলাফল সন্দেহের মুখে পড়বে। এজন্য নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আচরণবিধি অনুযায়ী, কাল রোববার সকাল ৮টায় শেষ হচ্ছে প্রচারণা। ১৮টি হলে ভোটগ্রহণ হবে সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। ভোটাররা নিজের আইডি কার্ড দেখিয়ে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে প্রার্থীর নামের ডানপাশে নির্ধারিত ঘরে ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোট দিবে। ভোট গ্রহণের পর ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
এদিকে আসন্ন এ নির্বাচনকে সামনে রেখে বুধবার ভিসি কার্যালয়ে হল প্রভোস্টেদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তাসহ ভোটের দিনে নানা করণীয় সর্ম্পকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে কোন সময় ব্যালট বক্স পাঠানো হবে এবং পোলিং এজেন্ট নিয়োগ হবে কিনা-তা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
জানা যায়, নির্বাচনের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি প্রবেশ পথ (নীলক্ষেত, শাহবাগ ও হাইকোর্ট) বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকবে। এসব প্রবেশ পথ দিয়ে শুধু ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিজ নিজ পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও বাহির হবে। ভোট কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট পাসযুক্ত যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত এই ৩টি গেইট দিয়ে চলাচল করবে। শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাচল ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ও স্টিকারযুক্ত যানবাহন ব্যাতীত অন্য কোন যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। ওইদিন সর্বসাধারণকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন গণমাধ্যম কর্মীরা চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয় পত্র দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে ভোট কেন্দ্রের গেস্টরুম/নির্ধারিত স্থান পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ভোট কেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। ভোট গ্রহণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবেনা। ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ফোনসহ সকল ধরনের ইলেট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ।