০৮ মার্চ ২০১৯, ১৯:১৩

ইতিবাচক রাজনীতির দৃষ্টান্ত গড়তে চায় ইশা ছাত্র আন্দোলন

  © টিডিসি ফটো

প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের ব্যবস্থা, অ্যাপের মাধ্যমে বাস সার্ভিস চালু, লাইব্রেরি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু, টিএসসি ও আবাসিক হলগুলোতে ফার্মেসী স্থাপন, স্ব-স্ব আদর্শ চর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসে মাদক ও দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও রাজনীতিতে ইতিবাচকতা নিশ্চিত করে বিশ্বমানের ক্যাম্পাস গড়ার অঙ্গীকার দিয়ে ডাকসু নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন (ইশা) সমর্থিত আতায়ে রাব্বী-মাহমুদুল হাসান-শরীয়াত উল্লাহ প্যানেল।

শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে গঠনমূলক এবং দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন (ইশা) সমর্থিত আতায়ে রাব্বী-মাহমুদুল হাসান-শরীয়াত উল্লাহ প্যানেল নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেখ ফজলুল করীম মারুফ এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। 

ইশা ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজকে কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয় বরং একটি জাতির ইতিহাসের নির্মাতা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও জ্ঞানগত পটপরিবর্তনের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম। একই সাথে এখানে কিছু কষ্টদায়ক বিষয়াবলীও রয়েছে।

কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম কাজ জ্ঞান-চর্চা, জ্ঞান-উৎপাদন ও জ্ঞান-বিতরণ এই কাজগুলোকে বিবেচনায় আনলে একথা দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হয় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপর্যুক্ত ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মানদণ্ডে অনেক পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্যব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা, পরিবহন, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, বিনোদন, মানসিক বিকাশ, নৈতিক উন্নয়ন, সহ-শিক্ষা কার্যক্রম, দক্ষতা-উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান হতাশাব্যঞ্জক।

আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল মানদÐের কষ্টিনিগড়ে বৈশ্বিকমানে উন্নত করার অভিপ্রায় নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছে, এই প্যানেলে নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছেন তিনজন। যুগপৎ নৃগোষ্ঠি এবং প্রতিবন্ধি প্রতিনিধিত্বও রয়েছেন। সম্পূর্ণরূপে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সমন্নয়ে গঠিত ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন মনোনীত প্যানেল নিম্নলিখিত খাতসমূহে একান্ত আত্মনিবেদিত হয়ে কাজ করার দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেছে।

নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকারগুলো হলো—

আবাসন:
১. ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কারপূর্বক পর্যাপ্ত হল নির্মাণ এবং বিধ্যমান হলগুলোকে অবৈধ দখলমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২. গেস্টরুম ও গণরুমের সংস্কৃতির বদলে মেধার ভিত্তিতে ও প্রয়োজনানুসারে প্রথমবর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য বৈধ সিট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা।
৩. হলগুলোকে বহিরাগত ও অছাত্রমুক্ত করতে শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

শিক্ষা ও গবেষণা :
১. বাজার যাচাই করে পাঠ্যক্রমকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা।
২. গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর মাধ্যমে বিশ্বমানের গবেষণা ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা।
৩. সকল ডিপার্টমেন্টের গবেষণাগারসমূহকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪. শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণ ও শিক্ষক নিয়োগে সকল প্রকার অনিয়ম বন্ধ করা।
৫. শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করা।
৬. বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে একাডেমিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
৭. বিজ্ঞানের নব নব উদ্ভাবনে অবদান রাখতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা করা।
৮. আন্তর্জাতিক সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা।
৯. শিক্ষার্থীদের মানসিক ও মননের বিকাশ এবং আত্মোন্নয়নে প্রদোনার্থ আন্তর্জাতিক শিক্ষা সফরের আয়োজন করা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি :
১. ভর্তি-কার্যক্রমসহ সকল কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা।
২. একটি ইনসাফপূর্ণ মনিটরিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় সকল ধরনের জালিয়াতি ও শিক্ষার্থী হয়রানী বন্ধ করা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা :
১. মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে বুকে ধারণ করে গঠণমূলক, নিষ্ঠাবান, সৎ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক ছাত্রনেতৃত্ব গড়ে তোলা।
২. শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে জাতীয় দিবসগুলোতে গোত্র, বর্ণ, মত-পথ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে বিভিন্ন নির্মল অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা।

পরিবহন সেবা :
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের চলমান ব্যবস্থাকে অধিকতর শিক্ষার্থীবান্ধব ও সহজীকরণার্থে পরিবহন রুট বাড়ানো এবং উন্নত ও মানসম্মত পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
২. সকল রুটের বাস সার্ভিস একটি নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত করা।
৩. ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীন শাটল সার্ভিসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং যানবাহনের যুক্তিসঙ্গত ভাড়া নির্ধারণ করা।

কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া :
১. কমনরুমে শিক্ষার্থীবান্ধব সকল সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা।
২. বন্ধের দিনগুলিতে পরীক্ষা ও ক্লাস চলাকালীন কমনরুম সুবিধা বহাল রাখা।
৩. মোকারম ও মোতাহার ভবনসহ সকল একাডেমিক ভবনে মানসম্মত ক্যাফেটেরিয়া স্থাপন করা।
৪. সকল ক্যাফেটেরিয়া এবং আবাসিক ক্যান্টিনগুলোতে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করা।

লাইব্রেরি :
১. লাইব্রেরি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা।
২. লাইব্রেরির সংগ্রহশালা সমৃদ্ধকরণ এবং আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করা।
৩. শিক্ষর্থীদের জন্য লাইব্রেরি সুবিধা ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা।
৪. লাইব্রেরির রেফারেন্স বিভাগকে আরও সমৃদ্ধ সহজ ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তোলা।

শিক্ষার্থীকল্যাণ:
১. মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং টিএসসি, ক্যাম্পাস শ্যাডো ও আবাসিক হলগুলোতে ফার্মেসি ও স্বাস্থসম্মত টয়লেট স্থাপন করা।
২. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা সেবা চালু করা।
৩. ক্যাম্পাস ও হলসমূহ সকলপ্রকার মাদক ও দূষণমুক্ত করে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা।
৪. দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা।
৫. শিক্ষর্থীদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করে তাদের মধ্য থেকে হতাশা ও দুঃশ্চিন্তা দূর করে কর্মচঞ্চল এবং উদ্দামী করে তোলা।

ছাত্র রাজনীতি:
১. ক্যাম্পাসে সকল ছাত্রসংগঠনের রাজনৈতিক সহাবস্থান এবং স্ব-স্ব আদর্শচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।
২. টিএসসি কেন্দ্রিক সকল সংগঠন এবং আবাসন ব্যবস্থা রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত রাখা।
৩. ক্লাস ও পরীক্ষা চলাকালীন একাডেমিক এলাকায় উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

সাহিত্য ও সংস্কৃতি:
১. সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চেতনা সৃজন-প্রয়াসে ক্যাম্পাসে হাজারবছরের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালি সংস্কৃতি তথা কৃষ্টি-কালচারের চর্চাকে উতরোত্তর সম্প্রসারিত করা।
২. ভিনদেশি সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার :
১. সকল আবাসিক হলে খাবারের গুণগতমান নিশ্চিৎ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি উপ-কমিটি গঠন করা।

ক্যাম্পাস :
ঢাবির ক্যাম্পাস একটি পবিত্র শিক্ষাঙ্গন। সঙ্গতকারণেই এখানে যে যেকোন উৎসব-পার্বনে মানুষের ঢল নামা অবান্তর। সেই গুরুত্ব বিবেচনায়—
১. ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আগমন বিধিসম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
২. ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৩. ক্যাম্পাসে বহিরাগত যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা।
৪. ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা।
৫. ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য একাধিক স্থানে ‘সাইকেল কেন্দ্র’ গড়ে তোলা। ঢাবি শিক্ষার্থী মাত্রই সেখান থেকে সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চলাচল করতে পারবে।