ডাকসু নির্বাচন: নজর কাড়ছে নারী প্রার্থীরা
আর মাত্র ৫ দিন। এরপরই দীর্ঘ ২৮ বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কাঙ্ক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ধুম প্রচার-প্রচারণা যেমন চলছে, তেমনি চলছে নানা অভিযোগ-অনুযোগও। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্নে প্রশাসনের ব্যস্ততাও রয়েছে চোখে পড়ার মত।
এদিকে ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে পুরুষদের নারী প্রার্থীদেরও মাঠ চষে বেড়াতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের মূল আসর তথা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মত নয়। হল সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্যানেল ছাড়া বাকি প্যানেলগুলোয় নারী প্রার্থীর সংখ্যা কম। তবে যে ক’জনই রয়েছেন, ক্যাম্পাস প্রচারণায় তারাই কাড়ছেন সবার নজর।
তথ্যমতে, নির্বাচনে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ শীর্ষ প্যানলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী প্রার্থীদের স্থান হয়নি। এক্ষেত্রে সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং সাধারণ সম্পাদকসহ (জিএস) মোট ২৫টি পদের মধ্যে ছাত্রলীগ প্যানেলে মোট ৭ জন নারী প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার এবং আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে লড়বেন শাহরিমা তানজিনা অর্নি। আর সদস্য পদে লড়বেন রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, নিপু ইসলাম তন্বী, ফরিদা পারভীন এবং তিলোত্তমা শিকদার।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এবং ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং ছাত্র ঐক্যের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ সমর্থিত বামজোটের প্যানেল থেকে নারী প্রার্থী আছেন মাত্র ১ জন। এর মধ্যে ছাত্রদল থেকে কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়ছেন কানেতা ইয়ালামলাম। আর কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সদস্য পদে লড়ছেন শেখ এমিলি জামাল। বামজোটের প্যানেল থেকে রয়েছেন আফনান আক্তার।
ছাত্র ফেডারেশন থেকে জিএস পদে উম্মে হাবিবা বেনজির, জাসদ ছাত্রলীগ থেকে জিএস পদে শাফিকা রহমান শৈলী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মনিরা ইসমাইল মীম এবং সাহিত্য সম্পাদক ইশরাত জাহান লড়ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী থেকে জিএস পদে সনম সিদ্দিকী, স্বতন্ত্র জোটের হয়ে ভিপি পদে অরণি সেমন্তি খান, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে শ্রবণা শফিক এবং সদস্য নহলি নাফিসা খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে দাঁড়িয়েছেন মালিহা সুলতানা।
আরও পড়ুন: লিফলেট ছিল না, একদিন পর প্রচারণায় ছাত্রদল!
তাছাড়া স্বতন্ত্রভাবে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফাহমিদা মজিদ, এজিএস পদে ফারাহ মাহযাবিন, বাংলাদেশ ছাত্র মুক্তিজোটের প্যানেল থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন প্যানেল থেকে কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নাসিমা আক্তার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে তামান্না তাসনিমম এবং সদস্য পদে লড়ছেন ফাতেমা আক্তার।
জানতে চাইলে স্বতন্ত্র জোট প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অরণী সেমন্তি খান বলেন, পারিবারিকভাবে বাধ্যবাধকতা না থাকলেও অনেকেই নির্বাচনে আসতে পারছেন না। কারণ, ক্যাম্পাসে এবং সামাজিকভাবে হ্যারেজমেন্টের ভয় আছে। তাই সবার বিষয়টি সামনে আসছে না। নির্বাচিত হলে নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাাসের সার্বিক পরিবেশ চিন্তা করলে আমরা দেখি, ক্যাম্পাস নারীবান্ধব নয়। ক্যাম্পাস তো দূরের কথা, বিভাগের শিক্ষক এবং সহপাঠীদের কাছে অনেক সময় তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কমন রুমের অভাব, ওয়াশরুমের সমস্যা, গ্রন্থাগারে পড়াশুনার সমস্যা- এসব তো রয়েছেই।
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে বিএম প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী লিপি আক্তার বলেন, ১৭ হাজার ছাত্রীদের মধ্যে নির্বাচনে শীর্ষ প্যানেলগুলোতে কোন নারী প্রার্থী নেই। এটা দুঃখজনক।
ছাত্রদলের প্যানেল থেকে কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কানেতা ইয়ালামলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে। এতে অনেক ছাত্রীকে শুধু নির্যাতনই নয়, বস্ত্রহরণের শিকারও হতে হয়েছে। এজন্য নারীরা এগিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে। নির্বাচনে যদি তারা জিততে না পারে; তাহলে হলের সিট থাকবে কি-না, ক্লাস করতে পারবে কি-না- এ ধরণের বিভিন্ন শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তারা এগিয়ে আসেনি। নির্বাচনে জয়ী হলে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন তিনি।
পড়ুন:প্রেম-বিয়ের ফাঁদে পড়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ফিলিপাইন তরুণী!