প্রতিদ্বন্দ্বিকে সরাতে ছাত্রলীগ নেতার স্বাক্ষর জালিয়াতি
হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম মিলন খান। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী।
অভিযোগ আছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে একই পদ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া স্বতন্ত্রপ্রার্থী শাকিলুর ইসলামের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে নিজ দলের অনুসারী এক কর্মীকে দিয়ে শাকিলের নামে ‘ভূয়া’ প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দরখাস্ত পাঠান। ফলে চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েন ওই প্রতিদ্বন্দ্বি। পরে হল প্রশাসনের তৎপরতায় প্রার্থীতা ফিরে পান তিনি। শাকিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও হলে স্বতন্ত্র সমাজসেবা পদপ্রার্থী।
হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হল সংসদে স্বতন্ত্রভাবে সমাজসেবা সম্পাদক পদে প্রার্থী হন শাকিলুর ইসলাম। কিন্তু রবিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হলে তালিকা থেকে বাদ পড়েন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিলন খান তার অনুসারি আবদুল্লাহ ইমন নামে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে দিয়ে শাকিলের নাম দিয়ে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আব্দুল্লাহ ইমনের বাড়ি উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে। হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রাথমিক তালিকায় শাকিলের নাম প্রকাশের পরই তাকে সরাতে ষড়যন্ত্র শুরু করেন মিলন খান। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে তাকে হুমকি দামকিও দেয়া হয়। কিন্তু শাকিল প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে ঢাকাস্থ এক আত্মীয়ের বাসায় চলে যায়। এসময়ের মধ্যে মিলন খান আব্দুল্লাহ ইমনকে দিয়ে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ভুয়া দরখাস্ত করেন। ইমনের আগে তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থীকে এ দরখাস্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন মিলন খান। কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় পরে আব্দুল্লাহ ইমনকে দিয়ে একাজ করানো হয়।
মিলন খান এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, এ ঘটনায় আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি নিজেও জানি না এটা কিভাবে হয়েছে। শাকিল আমার ছোট ভাই, তার বিরুদ্ধে আমার এমনটা করার প্রশ্নই ওঠে না। এ ধরণের কর্মকান্ডে তার জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্বেচ্ছায় নির্বাচন থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান তিনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, প্রাথমিক তালিকায় আমার নাম প্রকাশের পর আমি হল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাই এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর হলে আসি। পরে আমার নাম না থাকায় আমি হল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছি বলে আমাকে জানানো হয়।
এদিকে শাকিলের অভিযোগের ফলে রবিবার রাতেই ভুয়া দরখাস্ত যাচাই বাছাই শুরু করে হল কর্তৃপক্ষ। পরে ওই দরখাস্তে পাওয়া যায় নানা অসঙ্গতি এবং বেরিয়ে আসে আব্দুল্লাহ ইমনের নাম। রাতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রার্থীতা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় শাকিলকে। হল প্রভোস্ট বিষয়টি ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রফেসর এস এম মাহফুজুর রহমানকে অবহিত করলে তিনি শাকিলের প্রার্থীতা ফিরে পেতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মাহাবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, ভুয়া দরখাস্তকারী ইমনের জীবন বৃত্তান্ত আমাদের কাছে আছে। আমরা বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।