০৩ মার্চ ২০১৯, ২৩:০৭

মিছিল-গেস্টরুমের বিনিময়ে সিট প্রথা বাতিল করব: নুর

  © টিডিসি ফটো

প্রায় ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। রবিবার নির্বাচনের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আজ থেকে শুরু হয়েছে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা, নির্বাচনী ইশতেহারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী নুরুল হক নুর-এর সাথে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কথা হয়েছে। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন ইরফান হক—

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ স্বতন্ত্র প্যানেলে লড়ছেন। পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর লড়বেন ভিপি পদে। আলাপকালে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের অনেক দাবি উপেক্ষিত রেখেছে প্রশাসন। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে স্বতস্ফুর্তভাবে ভোট দিয়ে সঠিক নেতৃত্ব বাঁছাই করবে। এমন নেতা নির্বাচন করবে; যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে এবং তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকবে। ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রবান্ধব নেতা নির্বাচন করবে। তবে ২৮ বছর নির্বাচন না হওয়ার কারণে এখনো অনেকের মধ্যে একটা অনীহা তৈরি হয়েছে। এজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে প্রচারণা চালাচ্ছি; তারা যেন ভোট দিতে উৎসাহিত হয়।

প্রশাসনের প্রতি আমাদের অনুরোধ, জাতীয় নির্বাচনের মতো যেন ডাকসু নির্বাচন না হয়। এটা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কিত হবে। নির্বাচন যেন গ্রহণযোগ্য হয় এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয় তার পরিবেশ যেন তৈরি করা হয় এবং এই নির্বাচন যেন সকলের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকে। তবে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে আমরা এর কঠোর জবাব দিব।

নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। তফসিল ঘোষণার পর ঢাবির যে পরিবেশ ছিল তাতে আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু আজ দু’দিন ধরে ভিন্ন চিত্র দেখছি। যে বিভিন্ন হলে যারা স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছিল; তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চাপ দিয়েছিল ছাত্রলীগ। জোর করে বসিয়েও দিয়েছে। সুতরাং এই জিনিসগুলো আমাদের মধ্যে একটা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। 

আচরণবিধির মধ্যে রয়েছে কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ অপপ্রচার চালাতে পারবে না। কিন্তু ছাত্রলীগের নির্বাচন কমিটির সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস আমাদের ছবি দিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমাদের বলছে বিএনপি-জামায়াতের টাকা খেয়েছে। প্রশাসন দেখার পরেও এগুলোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা আজ লিখিত অভিযোগ দিব। এছাড়া, অনেকেই রঙিন ছবি ব্যবহার করছে; যা আচারণবিধি লঙ্ঘন। আমরা অভিযোগ দিয়েছি। রিটানিং কর্মকর্তা বলছেন, তিনি জানেন; কিন্তু কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

আমরা ক্যাম্পাসের বিদ্যমান সমস্যা নিয়েই সবার সামনে যাব। আমরা দেখেছি ভিন্ন মতকে দমন করার জন্য কিভাবে অত্যাচার করা হয়। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের বিরোধীরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারে না, ক্যাম্পাসে আসতে পারে না। কিন্তু উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র ঢাবিতে এটা হতে পারে না। ঢাবি একটা গণতন্ত্র চর্চার জায়গা হবে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করবো। এছাড়া ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়াতে পর্যাপ্ত ভুর্তুকি দেয়ার পরেও দেখা যায় যে খাবারের মান ভাল না। আর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতারা ফাও খায়, চাঁদা নেয়। এ কারণে খাবারের মান ভাল হয় না। আমরা এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ক্যান্টিনের খাবারের মান নিশ্চিত করবো।

এছাড়া বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের ওয়াশরুমগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী, সেগুলো নিয়ে কাজ করব। আমাদের যে লাইব্রেরী রয়েছে; তা কীভাবে আধুনিক করা যায় সেজন্য কাজ করব। হলে যেসব শিক্ষার্থী থাকে তারা রাজনৈতিক প্রোগ্রাম-গেস্টরুম নিয়মিত করলে তার বিনিময়ে সিট দেয়া হয়। আমরা এই অশুভ প্রথাকে প্রতিহত করব। 

হলে হলে ভোট কেন্দ্র না করার জন্য সবার দাবি ছিল কিন্তু প্রশাসন সেটি রাখেনি। তবে প্রশাসন চাইলে শিক্ষার্থীদের আস্থায় আনতে পারে। সেই লক্ষ্যে আমরা তাদের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছি। তার মধ্যে রয়েছে- প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে তিনজন নিরপেক্ষ শিক্ষককে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা হয়; ভোটের সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা; লাইভ সম্প্রচারের বাধা তুলে নেয়া প্রভৃতি। এই দাবিগুলো মানা হলে ভোট কেন্দ্র হলে হলে করতে কোন সমস্যা হবে না।

আমাদের ইশতেহারে ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ, হলে হলে যে রাজনৈতিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়; তা বন্ধ করা এবং প্রথম বর্ষ থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে প্রয়োজনের ভিত্তিতে সিট পায় সে ব্যবস্থা করা। এছাড়া খাবারের মান নিয়ে যে অভিযোগ রয়েছে; তার মান উন্নত, হলের রিডিংরুম উন্নত, টয়লেট উন্নত ছাড়াও যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে আমরা কাজ করব।