ছাত্রত্ব নেই, তবুও ভিপি প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা!
ছাত্রত্ব না থাকায় ও তথ্য গোপন করার অভিযোগে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদে ছাত্রলীগ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাইফুল্লাহ আব্বাছীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছেন একই হল সংসদে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী মো. সোলায়মান ইসলাম। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে জহুরুল হক হল অফিসে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
এর আগে ছাত্রত্ব না থাকার পরেও ভিপি প্রার্থী হওয়া নিয়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে সৃষ্টি হয় আলোচনা-সমালোচনা। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো প্রার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে সাইফুল্লাহ আব্বাছীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারই প্রেক্ষিতে শনিবার অভিযোগপত্র জমা দেন সোলায়মান। অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হল প্রশাসন।
এ বিষয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, আমি অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। অভিযোগপত্রে সোলায়মান বলেন, জহুরুল হক হল সংসদে সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী সাইফুল্লাহ আব্বাছী (ভোটার নং-২২৩৩) সুস্পষ্ট তথ্য গোপন করলেও তার প্রার্থীতা বাতিল হয়নি। তিনি ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশনের নম্বর ২০১২-৮১৪-৬৮৮।
গত ২৮ জানুয়ারি তার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে হল প্রশাসনকে অবহিত করেননি। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর তার ছাত্রত্ব না থাকলেও প্রার্থীতা বৈধ বলে গণ্য হয়েছে। যা ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদ গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায় আমি এই তথ্যটি হল প্রশাসনকে বিবেচনায় নিয়ে সাইফুল্লাহ আব্বাছীর প্রার্থীতা বাতিল করার জন্য আবেদন করছি।
এ বিষয়ে সোলাইমান ইসলাম মুন্না বলেন, হল প্রশাসন বলেছিল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অভিযোগপত্র জমা নেওয়া হবে। এজন্য সকাল সাড়ে ৯টায় হল অফিসে অভিযোগপত্র জমা দিতে যাই। কিন্তু অফিসের কর্মকর্তারা আমার অভিযোগপত্র জমা নিতে চায়নি। প্রাধ্যক্ষকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। হলের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কল দিলে তিনি অভিযোগপত্র হল অফিসে জমা দিতে বলেন। এরপর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আমি অভিযোগপত্র জমা দেই। তিনি বলেন, প্রার্থীতা তুলে নেয়ার জন্য আমাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে কল দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমি চাই, হলের শিক্ষার্থীরা যাকে চায়, সেই বিজয়ী হোক। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউকে নির্বাচিত করার যে চেষ্টা করা হচ্ছে, তা ঠিক হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। তিনি বলেন, আপনারা সব বিষয়ে আমাকে কেন ফোন দেন। এ বিষয়ে জানতে হলের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কল দেন। পরে বলেন, আমি হলের বাইরে আছি। তবে, একজন ছাত্র অভিযোগপত্র দিয়েছে বলে শুনেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তফসিল ঘোষণার আগে (১১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা হয়) যদি কোন ছাত্রের ফলাফল প্রকাশ হয় তাহলে তিনি ডাকসু বা হল সংসদে নির্বাচন করতে পারবেন না। কিন্তু জহুরুল হক হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেলে ভিপি (সহ-সভাপতি) প্রার্থী সাইফুল্লাহ আব্বাছীর মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে গত ২৮ জানুয়ারি। নিয়ম অনুযায়ী, তিনি ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। রবিবার ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।