০১ মার্চ ২০১৯, ১৯:৫২

বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগ ছাত্রদল ছাত্র ইউনিয়নের ত্রিমুখী লড়াই

উপর থেকে আকমল হোসেন, আমান উল্লাহ ও মাহির শাহরিয়ার রেজা  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদের নির্বাচন জমে উঠেছে। হলটিতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে ত্রিমুখী জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। হলের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে থাকলেও প্রার্থিতা মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অন্যান্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সংগঠনটির কয়েকজন নেতা; যা ভাবাচ্ছে ছাত্রলীগকে।

বঙ্গবন্ধু হলে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিন ছাত্রনেতা। এ হলে ছাত্রলীগের প্যানেলে ভিপি পদে লড়ছেন আকমল হোসেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাবেক ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী। ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি পদে লড়ছেন ফিন্যান্স বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের আমান উল্লাহ এবং ছাত্র ইউনিয়ন প্যানেলে ভিপি প্রার্থী মাহির শাহরিয়ার রেজা। তিনি একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র। এখানে ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা কোটা সংস্কার প্যানেলের কেউ নির্বাচন করছেন না বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়ছেন মাত্র দুজন। একজন ছাত্র ইউনিয়নের প্রত্নপ্রতিম মেহদী। তিনি নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্র। অন্যজন হলেন মো. মেহেদী হাসান শান্ত। তিনি ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাশের অনুসারী ও বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক সহ-সভাপতি। বঙ্গবন্ধু হলে জিএস পদে ছাত্রদল, কোটা সংস্কার প্যানেল ও স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী নেই।

মজার ব্যাপার হলো, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ছাত্রলীগ প্যানেলের মো. জুলফিকার হাসান পিয়াস। তিনি একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক।

এদিকে বঙ্গবন্ধু হল সংসদ ছাত্রলীগের প্যানেলে প্রার্থী মনোনয়নে অতিমাত্রায় স্বজনপ্রীতি ও এলাকাপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্বয়ং হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মনোনয়নে মারাত্মক এলাকা-প্রীতি হয়েছে। এলাকা-প্রীতির কারণে আমাকে প্যানেলে রেখে আবার বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি ছাত্রলীগের প্যানেলে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন। আরেকজন স্বতন্ত্র সাহিত্য সম্পাদক প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাকে ইতোমধ্যেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি ভোটারদের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যাই হোক না কেন, আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছি না।’

এছাড়া হল সংসদে ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের প্যানেলের সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী মো. জাকিউর রাফিদ নাফির বিরুদ্ধে নারীঘটিত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে বলে জানা গেছে। তিনি বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাবেক উপ-মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-২০১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ভুল ও অসত্য তথ্য।’

অন্যদিকে ছাত্রলীগের প্যানেলের আরেক সদস্যপ্রার্থী সিফাতুজ্জামানের চরিত্রগত সমস্যা আছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাকে কিভাবে ছাত্রলীগ মনোনয়ন দিল এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের ২০১৫-২০১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। তবে এ ব্যাপারে সিফাতুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিহিংসাবশত: এটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। হলের সবার সঙ্গেও সুসম্পর্ক আছে বলে তিনি জানান।

এলাকাপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতির বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এ অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ পরিবারে আমরা সবাই স্বজন। তাই এখানে স্বজনপ্রীতির প্রশ্নই আসে না। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই তারা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরো দেখুন: নিরপরাধ সুমনের কারাগারে কান্না, খোলা চিঠি ভাইরাল

আরো দেখুন: ডাকসু: শুরুতেই আচরণবিধি ভাঙলেন ছাত্রলীগ সভাপতি