জিয়া হলে ‘ছাত্রলীগের’ স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই জনপ্রিয়!
আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে পছন্দের অনুসারীদের মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। ফলে বাদ পড়েছেন ত্যাগী ও যোগ্যরা। ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে মনোনয়ন না পাওয়া এসব প্রার্থীরা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। তারা সবাই ছাত্রলীগের গত কমিটির বিশ্ববিদ্যলয় এবং হলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকা থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে আগামী ৩ মার্চ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ছাত্রলীগ বলছে, এটা তাদের কৌশল ছিলো মাত্র। আগামী ২ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওইদিন সবাই প্রত্যাহার করবে।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল সংসদে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মোট ছয় জন। এর মধ্যে তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছেন, তারা সবাই হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য সাবেক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার নাম শরিফুল ইসলাম। তিনি সদ্য বিদায়ী ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির সদস্য ছিলেন।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, বছর তিনেক আগে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার দায়ে তিন বছর বিভাগ থেকে বহিষ্কার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ অভিযোগ স্বীকার করে শরিফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে বিভাগে দুবছর ‘ইয়ার ড্রপ’ ছিল।
অন্যদিকে, তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন আশরাফ উল্লাহ (হলের সদ্য সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি), দিদারুল ইসলাম (ঢাবির সদ্য সাবেক কমিটির উপ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক) এবং আব্দুল্লাহ আল নাছের (হলের সদ্য সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক)।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মোট ছয় জন। এরমধ্যে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছেন। তারা দুজনই হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য সাবেক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। আরেকজন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন, যিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার নাম হাসিবুল হোসেন শান্ত। তিনি হলের সদ্য সাবেক কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন মো: দুলাল এবং তালহা জোবায়ের সামি। এরমধ্যে দুলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি এবং সামি হল শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রলীগ একটা ঐক্যবদ্ধ পরিবার। আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে।
ছাত্রলীগের অনেক নেতা স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের নির্বাচনী কৌশল ছিলো মাত্র। আমাদের কোন প্রার্থীর প্রার্থীতা যদি কোনো কারণে বাতিল হয়ে যায়, তাহলে ঐ বাতিল হওয়া পদটি ছাত্রলীগের অন্যকোনো প্রার্থী গ্রহণ করতে পারে। সেজন্য অনেকেই স্বতন্ত্র পদ থেকে দাঁড়িয়েছিলো। আশা করি, ২ তারিখ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন, এর আগে সবাই প্রত্যাহার করবে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নেয়া এক জিএস প্রার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্যানেলে যোগ্যদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের অনুসারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
আরেক ভিপিপ্রার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে পরে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল তাদেরকে দল মূল্যায়ন করেনি। ছাত্রলীগের কমিটি আর ডাকসু নির্বাচনের কমিটি এক বিষয় না বলেও তিনি মনে করেন।