ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন
ঢাবির হল সংসদ অফিসগুলো ব্যবহার হচ্ছে ভিন্ন কাজে, কয়েকটিতে নেই!
- রাইহান আহমেদ
- প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৫১ PM , আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪০ AM
এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ অফিসগুলোতে ছিল শিক্ষার্থীদের নিয়মিত আনাগোনা। সেগুলো ছিল প্রাণবন্ত। শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা সেখানে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয়সহ আলোচনা করতেন দেশ-বিদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা সমাজনীতি নিয়ে। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু না থাকায় হল সংসদ অফিসগুলোর কোনটি বর্তমানে ভূতুড়ে রূপ ধারণ করেছে, কোনোটি বা ব্যবহার হচ্ছে ভিন্ন কাজে।
বিভিন্ন হলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই তাদের হল সংসদ অফিস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কোনটি সংস্কারের প্রস্তুতি চলছে, আবার কোনটি পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। একাধিক হলে অফিসের এখন আর কোন অস্তিত্বই নেই। সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজে স্থায়ী বরাদ্দ পেয়েছে সেগুলো।
মানিক সিকদার নামে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি কখনো তাদের হল সংসদ অফিস সম্পর্কে কিছু শোনেননি। অনেক অনুসন্ধানের পর একজন প্রবীণ কর্মচারী হল সংসদ অফিসের সন্ধান দিতে সক্ষম হন।
হলের ক্যান্টিনের দ্বিতীয় তলায় অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে অফিসটি। দেখে বোঝার উপায় নেই, সেখানে একসময় ছাত্রনেতারা বসতেন এবং বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিতেন। ভূতুড়ে একটা পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পাশেই শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল। এ হলের সংসদ অফিসটি বর্তমানে গেমসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানেও প্রবীণ কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া আর কেউ জানেন না হল সংসদ অফিস কোথায়!
ওমর ফারুক ইমন নামে এক শিক্ষার্থীকে হল সংসদ অফিস চেনে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি অনেকক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দেন, 'না!' জাহিদ হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এতদিন ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার ফলে হল সংসদ অফিসটিও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই আমরা জানিনা সেটা আসলে কোথায়!
স্যার এ. এফ. রহমান হল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের হল সংসদ অফিস বর্তমানে বাঁধন ও ডিবেটিং সোসাইটি ব্যবহার করছে। অন্যদিকে বিজয় একাত্তর হল ও বিজ্ঞান অনুষদের অমর একুশে হলের কোনো হল সংসদ অফিস নেই বলে জানা গেছে।
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে গিয়ে দেখা যায়, হল সংসদ অফিসটি বর্তমানে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ও সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠানের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি আমাদের হল সংসদ অফিসটি সংস্কার করা হবে। আশা করছি দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।’
অন্যদিকে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের হল সংসদ অফিসটির অবস্থা মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে এটিও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য অডিটোরিয়াম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিদার শরীফ নামে হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হল সংসদ অফিসটি অন্যান্য হলের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় আছে। সামান্য সংস্কার করলেই তা ব্যবহার করা যাবে।
কবি জসীম উদ্দীন হলের হল সংসদ অফিসটি অধিকাংশ সময় তালা দেওয়া থাকে বলে জানা গেছে। তবে মাঝে মাঝে সেখানে রাজনৈতিক নেতারা আড্ডা দেন কিংবা খেলা দেখেন। দিদারুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অফিসটি বর্তমানে কী কাজে ব্যবহৃত হয় আমরা জানি না। তবে এটা জানি যে, এটাই ছিল আমাদের ডাকসু হল সংসদ অফিস।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের হল সংসদ অফিসটি ব্যবহার করা হচ্ছে রিডিং রুম হিসেবে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হলের গেস্টরুমের পাশেই অবস্থান এটির। নামফলকে লেখা আছে ‘হল সংসদ অফিস (বীর উত্তম)'। এখানে বসে পড়াশুনা করছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এ হলের শিক্ষার্থীরা জানান, অনেকদিন পর যেহেতু ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে, সেহেতু অফিসটাও সংস্কার করা হবে বলে আশা।
ফজলুল হক মুসলিম হল ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ঐতিহ্যবাহী হল। এ হল দুটিতে মূলত বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা থাকেন। ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র রাফসান জানি রিমন ও খন্দকার ফয়সাল আজম বাপ্পীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এ হলের হল সংসদ অফিসটি হলের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নিলয়’কে অফিসিয়ালি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, হল সংসদ অফিস কোনটা হবে সেটা ডাকসু নির্বাচনের পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এ সম্পর্কে জানতে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানকে ফোন দেয়া হলে তিনি কেটে দেন।
অপরদিকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের হল সংসদ অফিসটি বর্তমানে পত্রিকা রুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ হলের একজন কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হল সংসদ অফিসটি সংস্কার করা হবে কিনা তিনি জানেন না। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেও অস্বীকৃতি জানান তিনি।
ডাকসু হল সংসদ অফিস নিয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিয়া রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ডেফিনিটলি যতদ্রুত সম্ভব আমরা এটা সংস্কার করবো।’ তিনি আরো বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের অন্যান্য বিষয়গুলো শেষ করে আমরা হল অফিসের দিকে নজর দিবো। আর এটা সংস্কার করতে বেশি সময় লাগবেনা। সো, ইটস নট অ্যা বিগ ডিল।’
অন্যদিকে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অব্যবহৃত রুমটা তো আমরা জাদুঘর বানিয়ে রাখতে পারিনা। তাই এটি বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য গেমসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে আমরা দ্রুতই এটাকে সংস্কার করে ফেলবো।’ এটা করতে তেমন সময় লাগবেনা বলেও জানান তিনি।