ডাকসু নির্বাচন
তফসিলে ক্ষুব্ধ সবাই, স্বাগত জানালো ছাত্রলীগ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:৫২ PM , আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:২৩ PM
আবাসিক হলে বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের দাবিকে উপেক্ষা করে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বানের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তবে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এই তফসিলকে স্বাগত জানালেও বাকী সংগঠনের সুর ভিন্ন। কেউ এটিকে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনকে ‘জেতানোর আয়োজন’ বলে দাবি করছে। একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র না রাখায় নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তফসিলের প্রতিক্রিয়ায় পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘হলের বাইরে ভোটকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি দাবি আমরা উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছিলাম। বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠনই হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র চেয়েছে। আমাদের কোনো দাবিই সেই অর্থে গ্রহণ করা হয়নি তফসিলে।’ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বসে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী বলেন, সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনকে ‘জেতানোর আয়োজন’ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই তফসিলকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা স্মারকলিপি দিয়ে, আলোচনা করে নির্বাচন পেছানোর কথা বলেছিলাম, কিন্তু আমাদের কোনো কথাই তো শুনলো না। আমরা বলেছি, আগে সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু সেসব না করেই তফসিল দিয়ে দিল।
তিনি বলেন, এ থেকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ছাত্রলীগকে নির্বাচনে জেতানোর জন্য সব আয়োজন প্রশাসন করে রাখছে। হলে ভোটকেন্দ্র রাখার বিরোধিতা করে ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘হলগুলো তো তাদের (ছাত্রলীগ) দখলে। হলে ভোট হলে যে তা সুষ্ঠু হবে না, সেটাও জানা কথা।’ নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, তাদের দাবি উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণা করায় ‘উৎকণ্ঠা’র সৃষ্টি করেছে। তফসিল ঘোষণা একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা আমাদের মাঝে অনেক বেশি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি উপস্থাপন করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। সেই দাবিগুলোকে অগ্রাহ্য করে, শুধু একটি দলের সামগ্রিক বিবেচনাকে প্রাধান্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই বিষয়টা নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি করে।’ এ সময় তিনি জানান, ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সোচ্চার থাকবো।
ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের তফসিল হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানায়। নির্বাচিত নেতৃত্বের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা একটা স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চায় জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এমন ধরনের ছাত্র রাজনীতিই চায়, যারা তাদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।