০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২৩:০০

সহাবস্থান প্রশ্নে আপোষহীন ছাত্রদল, ছাত্রী হলে প্রার্থী সংকট!

ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছাত্রদল  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ১১ মার্চ। নির্বাচনকে ঘিরে সব মহলে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। তবে ক্যাম্পাস ও হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান, প্রশাসনের ভূমিকাসহ নানা কারণে শঙ্কাও রয়েছে ২৮ বছর না হওয়া এই নির্বাচন নিয়ে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন সহাবস্থান ও হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্রের পক্ষে অনঢ় অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে দীর্ঘকাল সহাবস্থান না থাকায় ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্যের বিপরীতে অন্যান্য সংগঠনগুলোর কার্যক্রম কিছুটা গতি হারিয়েছে। সেভাবে নতুন কর্মী যোগ না হওয়ায় ছাত্র হলে সম্ভব হলেও ছাত্রী হলগুলোতে পূর্ণ প্যানেল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সবশেষ ডাকসুতে জয় পাওয়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে ছাত্রী হলে সংগঠনটির অসংখ্য ‘সুপ্ত সমর্থক’ রয়েছেন, যাদেরকে প্রার্থী করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানালেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান।

জানা যায়, গত ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার অন্যতম কারণ ছিলো ক্যাম্পাসে সহাবস্থান না থাকা। যখন যে দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো সে দলেরই ছাত্র সংগঠন একচেটিয়া অধিপত্য দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলোতে। ফলে গত প্রায় তিন দশকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েকবার নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও সহাবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় ডাকসু নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। এবারও সহাবস্থান প্রশ্নেই নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা সবচেয়ে বেশি।

সহাবস্থান ছাড়া নির্বাচন নয় : ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কয়েক দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ছাত্রল । এদিন ক্যাম্পাস ও হলে কার্যকর সহাবস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে নির্বাচন তিন মাস পেছানো ও হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানায় সংগঠনটি। তবে ছাত্রদলের দাবি আমলে নেননি উপাচার্য। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচন চায় কিনা সে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাক আবুল বাশার সিদ্দিকী। তবে সহাবস্থান নিশ্চিত না হলে ডাকসু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাক।

এদিকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান অভিযোগ করেছেন, সহাবস্থান প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে একটা গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রায় তিন দশক পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, কিন্তু প্রার্থীতা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অধিকাংশ সংগঠনের মতামতকে অগ্রাহ্য করে একটি সংগঠনের (ছাত্রলীগ) চিন্তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে ঢাবি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদৌ নির্বাচন চায় কিনা এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়েছে, তাতে সংক্ষুব্ধ কেউ হাইকোর্টে রিট করলে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

আকরামুল হাসান বলেন, নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পরও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রদলের সদস্য বোরহান উদ্দিন সৈকত, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুনের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি পর্যন্ত গঠন করেনি প্রশাসন। সহাবস্থানের উপর ছাত্রদলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।

ছাত্র হলে প্রার্থী মিললেও ছাত্রী হলে ‘সুপ্ত সমর্থকরাই’ ভরসা : দীর্ঘ ৯ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। রাজনৈতিক কর্মকান্ড তো নেইই, সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন। ফলে বিগত কয়েক বছর নতুনকরে সংগঠনটিতে কর্মী যোগ হওয়ার হার খুবই কম। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের পর থেকে নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় ছাত্রত্ব এবং বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করে ডাকসু নির্বাচনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে একক প্যানেল দিতে হিমসিম খাচ্ছে ছাত্রদল।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রদলে কর্মী সংকট নেই। ৩০ বছর বয়সের ভেতর যথেষ্ঠ নেতাকর্মী রয়েছে তাদের। তবে ছাত্র হলে প্যানেল দিতে অসুবিধা হবে না জানালেও ছাত্রী হলে ছাত্রদলের সংগঠন না থাকার বিষয়টি শিকার করে সেখানে ভিন্ন কৌশল অবলম্বনের কথা জানলেন তিনি।

মেহেদী তালুকদার বলেন, ছাত্রীদের নিরাপত্তা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে হলের বাইরে থাকা সম্ভব হয় না। ছাত্রদল করার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই ক্যাম্পাসে যেতে পারেন না, হলে থাকতে পারেন না। এ অবস্থায় ছাত্রীদের নিরাপত্তাগত কারণে সেখানে ছাত্রদলমনা কর্মীদের প্রকাশ্যে আনা হয় না।কমিটি না থাকলেও বিএনপি পরিবারের শিক্ষার্থীরাই ছাত্রদল থেকে প্রার্থী হতে পারবেন বলে তিনি জানান।

আর কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান জানালেন, ছাত্রী হলে তাদের ‘সুপ্ত সমর্থকরা’ ছাত্রদল থেকে প্রার্থী হতে পারেন।

একক প্যানেল, প্রয়োজনে জোটগত নির্বাচন : এখন পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে একক প্যানেল দেবার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সবশেষ ডাকসু’তে জয়ী হওয়া দেশের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ নিয়ে কয়েকদফা বৈঠক করেছে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় সংসদের নেতারা। তবে এখন পর্যন্ত প্রার্থীতা কিংবা প্যানেল চূড়ান্ত করতে পারেনি সংগঠনটি। জোটগতভাবে নির্বাচন করার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রল নেতারা বললেন, সময় এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় লক্ষ্য ও আদর্শের মিল থাকলে যেকোনো সংগঠনের সঙ্গে জোট হতে পারে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ছাত্রদল নেতারা।