ক্ষোভ ঝরছে ‘হলে ভোটকেন্দ্র’ ও ‘সিসিটিভি’ ইস্যুতে
ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ক্যাম্পাসের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে করার জোর দাবি উঠলেও তা পাত্তা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে হলেই ভোটকেন্দ্র স্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়েও দিয়েছে দ্বিধা-বিভক্ত সিদ্ধান্ত। যা নিয়ে ইতোমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে কোনো কোনো ছাত্র সংগঠন।
ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে সিন্ডিকেটের তথ্য জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান বলেছেন, ‘‘গঠনতন্ত্রের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলেই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।’’ আর সিসিটিভি স্থাপনের বিষয়ে বলেন, হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি আছে। প্রয়োজনে আরও ব্যবস্থা করা হবে। তবে বুথকেন্দ্রে সিসিটিভি ও নির্বাচনকে ঘিরে আলাদাভাবে সিসিটিভি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনার কথা জানাননি তিনি।
এদিকে হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইতোমধ্যেই বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। সংগঠনটির পক্ষ থেকে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে। তাৎক্ষণিভাবে ক্ষোভ জানিয়েছে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নেতারাও।
তারা বলছেন, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি ছিল ভোটকেন্দ্র হলে না করে একাডেমিক ভবনে করার। কিন্তু দাবির বিপরীতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় হতবাক হয়েছেন তারা। এছাড়া ভোটকেন্দ্র হলে করা হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলেও দাবি করেছেন তারা।
ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, প্রশাসন হলে ভোট করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা একপাক্ষিক। ১৫টি সংগঠনের মধ্যে ১৩টি সংগঠনের যেখানে বাইরে করার দাবি জানিয়েছে; সেখানে এ ধরণের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাব।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মন তমা বলেন, আমরা মনে করি এটি একটি অগনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ হলে তাদের দখলদারিত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। একজন ছাত্রকে হলে ওঠার পর গণরুম এবং গেস্টরুমে যেভাবে ছাত্রলীগ তাদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য করে। ফলে ভোটকেন্দ্র যদি হলে হয়; সেখানে ছাত্ররা স্বাভাবিকভাবেই তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ছাত্রলীগ লাভবান হবে। তাদের যদি কোন ভীতি বা শংকা না থাকে; তাহলে তারা কেন হলে ভোটকেন্দ্র চাচ্ছে? তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জেনে বুঝে তাদের মত প্রকাশ ও ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান। প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করবে; সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের বয়সসীমা ৩০ এর মধ্যে তাই বয়স ৩০ রাখা হয়েছে। বৈঠকে সহাবস্থান নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। এসব কিছুই করা হয়েছে ছাত্রলীগকে জেতানোর জন্য। আমরা আমাদের অনানুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া কাল জানাব।’
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক নুর লিখেন, ‘হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করা প্রায় সকল ছাত্রসংগঠনসমূহের দাবি হওয়া সত্ত্বেও তা প্রত্যাখান করে ১টি ছাত্রসংগঠনের দাবি মেনে ভোটকেন্দ্র হলে করার সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যাচ্ছে; তারা কেমন নির্বাচন করতে চাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের এক রায়ের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্ধারণ করেছে নির্বাচনের তারিখও। ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ১১মার্চ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।এদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেসব সভার সুপারিশের আইনগত সিদ্ধান্ত আজ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে চূড়ান্ত হলো।