অপূর্ণই থাকছে শীর্ষ নেতাদের প্রার্থীতার স্বপ্ন!
ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশির ভাগ সংগঠনেরই চাওয়া ছিল অন্তত প্রার্থীতার ক্ষেত্রে ছাত্রত্বের বিষয়টি শিথিল হোক। ছাত্রনেতাদের এমন প্রত্যাশার কারণে সবার চোখ ছিল ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশের ওপর। কিন্তু সোমবার পরিবেশ পরিষদের বৈঠকে কমিটির দেয়া সুপারিশে ছাত্রনেতাদের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়নি। চূড়ান্ত সুপারিশ সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেলে অপূর্ণই থেকে যাবে শীর্ষ নেতাদের ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়ার স্বপ্ন।
সোমবার ডাকসু ও হল সংসদের বিদ্যমান গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে প্রশাসন গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে তাঁদের চূড়ান্ত সুপারিশ দিয়েছেন। এই কমিটি ছাত্র সংগঠনের দাবি সত্ত্বেও গঠনতন্ত্রে প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার যোগ্যতার ধারা কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ না করায় কেবল নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, শুধু নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীতা করতে পারবেন। ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে এমন শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা ডাকসুর সদস্য ও প্রার্থী হতে পারবেন না। এমন সিদ্ধান্তের ফলে ছাত্রসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বেশ কয়েক দফায় বৈঠকের পর গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় পরিবার এখন ডাকসু নিয়ে ব্যস্ত। সব জটিলতা কেটে যাওয়ায় ক্রিয়াশীল রাজনীতিক দলগুলোও সরব। ছাত্রসংগঠনগুলোর হাইকমান্ডে নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া নিয়ে চলছে ব্যস্ততা। যদিও ছাত্রত্ব না থাকায় বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে প্রার্থীতাই করতে পারছেন না প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে নিয়মিত ছাত্রের শর্ত পূরণ করতে না পারায় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বাম-সংগঠনগুলোর অনেক পরিচিত নেতাই প্রর্থীতার সুযোগ পাবেন না। তথ্যমতে, ছাত্রলীগের চার শীর্ষ নেতার তিনজন, ছাত্রদলের চারজন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটভুক্ত ৪টি বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদভুক্ত ৩টি ছাত্রসংগঠনের ১০ জন- সব মিলিয়ে ৯ টি সংগঠনের ১৭ জন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন না ৷
ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ও ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয় বিবেচনায় নিলে ডাকসু নির্বাচনের আলোচনায় সবার আগে আসে ছাত্রলীগের কথা। অথচ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তিন শীর্ষ নেতাই ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ভর্তি হন ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে। সে হিসাবে এ তিনজন নেতা নিয়মিত ছাত্রের তালিকায় পড়েন না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। শিক্ষাবিরতি থাকায় তার ছাত্রত্ব এখনো শেষ হয়নি।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সনজিৎ চন্দ্র দাস বলেন, সবাই যেভাবে নির্বাচন করবেন, আমরা সেভাবেই প্রার্থী ঠিক করব। গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে যেহেতু দীর্ঘদিন পর নির্বাচনটা হচ্ছে, সেহেতু একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রার্থী হওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। তাঁদের সেই সুযোগটা পাওয়া উচিত বলে মনে করি।’
অন্যদিকে ছাত্রত্ব না থাকায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে ছাত্রদলও। ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সে হিসেবে এ দু’জনও নিয়মিত ছাত্রের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেক আগেই। ফলে তারা তাঁরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
এ সম্পর্কে আল মেহেদী তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাইরেও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের দলের অনেকেই নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
ছাত্রত্ব নেই ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীরও। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। লিটন নন্দী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রের কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই। কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। অন্য মাস্টার্সগুলোর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও তো বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসুর ফি নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিকভাবে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আমরা তা সাধুবাদ জানাব। আমরা চাই ডাকসু নির্বাচনটা হোক।’