১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:১৪

ডাকসু: কোটা আন্দোলনকারীরা কি নির্বাচন করবে?

আশাজাগানিয়া সংবাদ। দীর্ঘ ২৮ বছর বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জট খুলছে। সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা নিয়ে ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। আছে শঙ্কাও। তাদের ভাষ্য, নির্বাচন হয়তো হবে; কিন্তু তাতে কতটুকু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকবে কিংবা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আদৌ সুষ্ঠু পরিবেশে হবে কিনা— তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর মত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র নেতারাও এই নির্বাচনে অংশ নেবে।

নেতারা বলছেন, সুষ্ঠুভাবে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখনও পরিবেশ তৈরি হয়নি। তাদের দাবি, নিজ ক্যাম্পাসে নিজেদের অধিকার নিয়েই শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না। সেখানে ডাকসু নির্বাচনে তো সামগ্রিক বিষয় জড়িত। সেই নির্বাচন কতটুকু অবাধ হবে; তা বোঝা যাচ্ছে। তবে প্রশাসন যদি তাফসিল ঘোষণার আগে ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীর সমান অধিকার ও সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারে; তাহলে অবশ্যই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ডাকসু নির্বাচনের জন্য কিছু কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা— সেটা দেখার বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে কোন কর্মসূচি পালন করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছি। সেখানে নির্বাচন কীভাবে করব? প্রশাসন যদি সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেয় এবং কয়েকটা পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে আমরা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিব। আর যদি এ অবস্থা চলতে থাকে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত না হয়; তাহলে কোন সাজানো নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই।’

জানা যায়, রাজনৈতিক সমীকরণের বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় প্লাটফর্ম কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে গড়া সাধারণ শিক্ষার্থীর অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গত বছর তথা ২০১৮ সালজুড়েই ওই পরিষদের শান্তিপূর্ণ কমর্সূচিতে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে সমালোচনা কুড়িয়েছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। রয়েছে হাতুরি দিয়ে পেটানো ও নারী সম্ভ্রমহানির মত ঘটনাও। বিষয়টি শুধু এতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, হামলার পর জেল-জুলুম ও কারাগারেও যেতে হয়েছে এই সংগঠনের অনেক নেতাকে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ তথা সরকারপন্থীরা সমালোচিত হলেও বিনিময়ে সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আবেগের জায়গা থেকেও তারা ডাকসু নিবার্চনে অংশ নেয়ার কথা ভাবছেন।

কোটা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রশাসন মুখে সহাবস্থানের কথা বললেও ক্যাম্পাসে সকল সংগঠনের জন্য সমান অধিকার নেই। তার ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে হলে প্রশাসনকে কাজে প্রমাণ দিতে হবে। তাদের দেখাতে হবে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করছেন। যদি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন থাকে; তবে এই প্লাটফর্ম ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখবে।’

জানা যায়, নিবার্চনের জন্য এরই মধ্যে সব ধরনের আইনগত জটিলতা দূর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ বলছেন, তারা আগামী মাচের্র মধ্যেই নিবার্চন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে ভোটার তালিকার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন কতৃর্পক্ষ। সময়োপযোগী করতে গঠনতন্ত্রও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত লিখিতভাবে গ্রহণ করেছেন।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩৬ বার ডাকসু নিবার্চন হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরে মাত্র সাতবার ডাকসু নিবার্চন হয়েছে। ডাকসুর সবের্শষ নিবার্চন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এরপর ৯১, ৯৪, ৯৫ ও ২০০৫ সালে তফসিল, এমনকি নিবার্চনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও কিছু সহিংস ঘটনা, সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা ও ছাত্র সংগঠনের বিরোধিতা ইত্যাদি কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।

২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ থেকে বিক্ষোভ, ধমর্ঘট ও কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে ডাকসু নিবার্চনের দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আদালতে মামলার কারণে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে এ দাবি আবার সামনে আসে। ওই বছরের ২৯ জুলাই ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া উপাচার্য প্যানেল নিবার্চনকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে; যা ঢাবি প্রশাসনকে তীব্র সমালোচনার মুখে ফেলে। এরপর শিক্ষার্থীর আন্দোলন, রাষ্ট্রপতির নির্দেশ এবং আদালতের চাপের মুখে ২০১৮ সালে এসে বতর্মান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে নিবার্চন আয়োজনের ঘোষণা দেন।