নির্বাচনী শঙ্কায় আগেভাগেই হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাকি মাত্র ১২ দিন। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে মানুষের মাঝে বাড়ছে বিভিন্ন অজানা ভয় ও শঙ্কা। বিশ্বের অনেক দেশের মানুষের কাছে নির্বাচন একটি উৎসব হলেও বাংলাদেশের মানুষের জন্য তা ব্যতিক্রম। নির্বাচন এলেই এদেশের মানুষ অজানা বিপদের আশঙ্কায় থাকে। আর এ আশঙ্কায় এবার আগেভাগে অনেকটা তাড়াহুড়া করেই হল ছাড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ডিসেম্বর মাসের অর্ধেক সময় না যেতেই প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে হলগুলো।
ক্যাম্পাসের যেসব জায়গা সবসময় কোলাহল মুখর থাকে, আড্ডা কমে গেছে সেসব এলাকায়। যেসব হলের ক্যান্টিনে খেতে যেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হতো সেখানে অনেক চেয়ার এখন খালি পড়ে থাকছে। কিছু কিছু হলে চালু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটিকালীন সময়ের সবচেয়ে পরিচিত শব্দ ‘সেল্প-সার্ভিস’ ।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে অজানা শঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ ক্লাস পরীক্ষার নির্ধারিত সময় এগিয়ে নিয়ে এসেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন নির্বাচনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা বা হল বন্ধের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাভাবিক গতিতেই চলছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল সরজমিনে পদখিন করে দেখা যায়, তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই হল ছেড়েছেন। অন্যান্য বছরগুলোতে ডিসেম্বরের শেষ দশকে শীতকালীন ছুটি থাকলেও শিক্ষার্থীরা
আস্তে ধীরে হল ছাড়েন। আর কিছু শিক্ষার্থীতো এমনও আছে যারা ইদের ছুটিসহ লম্বা ছুটিগুলোও ক্যাম্পাসেই কাটান। শিক্ষার্থীদের পছন্দের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ক্যান্টিনে বসার জন্য আগে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলেও এখন অনেকগুলো টেবিল ফাঁকাই পড়ে থাকছে। কবি জসিমউদ্দিন হলে চালু হয়েছে সেল্প সার্ভিস। আর শিক্ষার্থীদের প্রিয় মুহসীন হলের লুচি দোকানগুলো ক্রেতার অভাবে একটি ছাড়া বাকি সব বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব বিভাগে এখনও পরীক্ষা চলছে তারাও দ্রুত পরীক্ষা শেষ করে বাড়ী যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। ক্যাম্পাসের ছাত্রনেতাদের মধ্যে বেশীর ভাগই আসন ভিত্তিক প্রচারণা কমিটিতে দায়িত্ব পাওয়ায় হল ছাড়ছেন। তবে নির্বাচন কেন্দ্রিক কিছু নেতা-কর্মী হলেও থাকবেন বলে জানা গেছে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হল ও ক্যান্টিন খোলা থাকবে
শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে গেলেও যারা ক্যাম্পাসে থাকবে তাদের যেন কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য হল এবং ক্যান্টিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের যেন কোন সমস্যা না হয় এজন্য বিভিন্ন হলের হাউজ টিউটরদের আলাদাভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূ্র্যসেন হলের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিনেই নতুন নতুন শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি চলে যাবো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোন ধরণের শঙ্কার কারণ নেই। এখানকার ছাত্র-শিক্ষক সবাই ভোটার। হল বন্ধ করে দেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। হলে থাকতে ছাত্রদের যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য আমাদের সকল ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোন বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নিবে।’