চারুকলার বকুলতলায় শরৎ উৎসব
ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় প্রকৃতিতে আবারো শরৎ এসেছে। ঋতুর রাণী শরৎকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করেছে শরৎ উৎসব। আজ শনিবার চারুকলার বকুলতলায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রকৃতিপ্রেমীরা এই উৎসবকে নাচ, গান আর শরৎকথনের মাধ্যমে মাতিয়ে রেখেছেন।
সকালে শিল্পী মো. নুরুল হকের যন্ত্রসঙ্গীত ‘সন্তুর’ পরিবেশনের মধ্যদিয়ে ‘শরৎ উৎসব ১৪২৫’ এর শুভ সূচনা হয়। উৎসবে শরৎকথন পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, আমরা যে বলি, আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য; সেটির মধ্যে শরৎ একটি শক্তিশালী অনুষঙ্গ। মানুষের হৃদয়ের যে প্রশস্ততা, শরৎ সেখানে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। মানস কাঠামোতে, জীবনাচারে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আসে শরতের দুর্গোৎসব। শরৎ সেখানে অনেক গ্রহণীয়। তাই শুধু আনন্দ-উৎসবে নয়, শরতসহ সব ঋতুবৈচিত্র্যের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। বাঙালির মানস কাঠামোতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।
এসময় শরৎ উৎসবের তাৎপর্য নিয়ে আরও কথা বলেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি ড. নিগার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।
এর আগে সন্তুর পরিবেশনায় শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে একক সঙ্গীত পর্বে মহাদেব ঘোষ গেয়ে শোনান রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘অমল ধবল পালে’, শিল্পী অনিমা রায় শোনান রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার রাত পোহালো ও দেখো দেখো সুখতারা’, সুমনা মজুমদার শোনান নজরুলসঙ্গীত ‘ভোরের ঝিলের জলে শালুক পদ্ম তোলে’, সঞ্জয় কবিরাজ শোনান নজরুল সঙ্গীত ‘শিউলি ফুল দোলে’ এবং বিমান চন্দ্র বিশ্বাস শোনান ‘ও আকাশ বল আমারে’।
দলীয় সঙ্গীত পর্বে রবীন্দ্রসংগীত ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী শোনায় নজরুল সঙ্গীত ‘আজি শারদ প্রাতে’, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী শোনায় ‘আজও আছে একতারা আর নকশি কাঁথার মাঠ’, বহ্নিশিখা শোনায় ‘বিশ্ব সাথে জেগে যেথায় বিহারো’।
এরপর দলীয় নৃত্য পর্বে সালমা মুন্নির পরিচালনায় দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষ, অনিক বসুর পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন, নাঈম হাসান সুজার পরিচালনায় নৃত্যজন, ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় বাফা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে। পশ্চিমবঙ্গের হালিশহর থেকে আগত ‘ছন্দে ছন্দে’ নৃত্য দলের বিশেষ পরিবেশনা ছিল শরৎ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ।
উৎসবে বিকেলের পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, গীত শতদল, সমন্বয়, পঞ্চভাস্বর, উজান। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে কণ্ঠশীলন, ঢাকা স্বরকল্পন ও কল্পরেখা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন রেজীনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাসুদুজ্জামান, আহসান উল্লাহ তমাল, আজিজুল বাশার মাসুম ও তামান্না সারোয়ার নীপা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে আঙ্গীকাম, নটরাজ, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র, ঘাসফুল নদী শিল্পী গোষ্ঠী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন মীরা মণ্ডল, ফেরদৌসী কাকলী, রত্না সরকার, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, আবিদা রহমান সেতু, শিমুল সাহা, সৌরভ, সঞ্জয় কবিরাজ, মাহজাবিন রহমান শাওলী, এস এম মেজবাহ, আঁখি বৈদ্য ও আরিফ রহমান।