০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট রেখে নবমকে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে মেধা তালিকায় শীর্ষস্থানধারীদের বাদ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন বর্ষে ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া প্রার্থীদের বাদ দিয়ে মেধাক্রম নবম স্থানে থাকা এক প্রার্থীকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা প্রার্থীসহ ওই বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমদের সভাপতিত্বে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে তিনজন প্রভাষক (স্থায়ী) নিয়োগের জন্য বোর্ড সভা বসে। এতে উপস্থিত ছিলেন- বোর্ড সদস্য সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল করিম, অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান ও অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।

বোর্ডে ৩৪জন প্রার্থীর মধ্য থেকে তিনজনকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপ্রাপ্তরা হলেন- ইশরাত জাহান ইয়ামুন; সিজিপিএ অনার্স ও মাস্টার্স যথাক্রমে ৩.৭৪ ও ৩. ৮৮, ওয়াসফিয়া শাম্মা; সিজিপিএ যথাক্রমে ৩.৭২ ও ৩.৮৩ এবং ফাইজুল হক ইশান; সিজিপিএ যথাক্রমে ৩.৫৮ এবং ৩.৭৫(মেধাক্রম নবম)

এর মধ্যে ফাইজুল হক ইশানকে নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, অন্তত ১৫জন প্রার্থী সিজিপিএ’তে তার থেকে এগিয়ে ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন প্রার্থী ছিলেন যারা অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। এছাড়া অন্তন দুইজন প্রার্থী ছিলেন যারা উভয় পরীক্ষায় মেধাক্রমে তৃতীয়।

সুপারিশকৃত ফাইজুল হক ইশানের থেকে মেধাক্রমে এগিয়ে থাকা কিছু প্রার্থী হলো -সাইফুল ইসলাম অনার্স ও মাস্টার্সে সিজিপিএ যথাক্রমে ৩.৬৬ ও ৩.৮২ (মেধাক্রম প্রথম), মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন সিজিপিএ যথাক্রম ৩.৭৬ ও ৩.৯২ (মেধাক্রম প্রথম), তৌহিদ হোসেন খান ( অনার্সে প্রথম স্থান, বিদেশি ডিগ্রি আছে), এবি এম নুরুল্লাহ সিজিপিএ যথাক্রম ৩.৬৩ ও ৩.৭৬, শেখ রুকাইয়া হাসান সিজিপিএ ৩.৭১ ও ৩.৭৩, রাসেল হোসাইন সিজিপিএ ৩.৬৩ ও ৩.৭৮ (মেধাক্রম তৃতীয়), শামসুল আরেফিন সিজিপিএ ৩.৬৬ ও ৩.৭৩ (মেধাক্রম তৃতীয়), মাসুদুর রহমান সিজিপিএ ৩.৬৫ ও ৩.৬৮।

এই ঘটনায় মেধাতালিকায় শীর্ষে থাকা প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক প্রার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ভাইভা বোর্ডে ইচ্ছাকৃতভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। শীর্ষ মেধাবীদের বাদ দিয়ে অন্যদের শিক্ষক করলে পরিশেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলতেন বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে থাকা লোকজন। এখন তারাই অযোগ্যদের নিয়োগে সুপারিশ করছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভয়াবহ হবে।

একটি সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম মেধা তালিকায় পিছিয়ে থেকেও সুপারিশপ্রাপ্ত ইশানের থিসিস সুপারভাইজার ছিলেন। ভাইভাতে তিনি তাকে অধিক নম্বর দিয়েছেন বলে অন্যান্য নিয়োগপ্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া তাকে আগে থেকে শিখিয়ে নিয়ে আসা হয় বলে একজন বোর্ড সদস্য অভিযোগ তোলেন।

মেধাবীদের রেখে তুলনামূলক কম মেধাবীকে সুপারিশের বিষয়ে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, আমরা কেবল সুপারিশ করেছি। সিন্ডিকেট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। বিষয়টিতে তিনি সিলেকশন বোর্ড সভা প্রধান অধ্যাপক নাসরীন আহমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন। আরেকজন বোর্ড সদস্য অধ্যাপক নেহাল করিমও প্রো-উপাচার্যের (শিক্ষা) সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ও প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ।

এখানে উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) এর সভাপতিত্বে বোর্ড বসে। বোর্ডে সুপারিশকৃতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হয়। আগামী সোমবার সিন্ডিকেটের সভা রয়েছে।