০৩ মে ২০১৯, ১৬:৩৪

‘সাহসিকা নুসরাত, তুমিই যুক্তি-তুমিই প্রতিবাদ’

  © টিডিসি ফটো

নুসরাত একটি প্রতীক। এক প্রতিবাদী মেয়ে। নুসরাতের মতো আর কোনো ঘটনা আমরা দেখতে চাই না। আমরা দেখছি প্রচলিত ব্যবস্থায় মামলা করতে গেলে মামলা নেওয়া হয় না, বাদীকে পালিয়ে বেড়াতে হয়, সরকারি লোকেরাই বাদীকে বিরক্ত করছে-আবার প্রচুর আইন থাকা স্বত্ত্বেও তার সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় সবার আস্থা কমে যাচ্ছে। শুক্রবার এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও এটিএন বাংলার যৌথ আয়োজনে ‘নিপীড়ন বিরোধী’ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এসব কথা বলেন।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। জনমনে আস্থা অর্জনের জন্য অবশ্যই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং সমস্ত ধরনের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। অন্যায় করে পার পাওয়ার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্যায়কারীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তা দৃশ্যমান দ্রুতসময়ে করতে হবে।

প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এই প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা করছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। বাছাইকৃত কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। নুসরাতকে উৎসর্গ করা এই প্রতিযোগিতার শ্লোগান হচ্ছে-‘সাহসিকা নুসরাত, তুমিই যুক্তি-তুমিই প্রতিবাদ’। 

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড শুধু আমাদেরকে সজাগ করেছে। এরকম ঘটনার অনেক কারণ থাকলেও আমাদের সামগ্রিক মূল্যবোধের প্রচন্ড অবক্ষয় প্রমাণিত হয়েছে। এই অবক্ষয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। একই সাথে সর্বত্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, থানা, পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ কোথাও বিচার না পেয়ে নিযাতনের বিরুদ্ধে গাজীপুরের দিনমজুর হজরত আলী তাঁর মেয়ে বিচার না পেয়ে ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করে তার প্রতিবাদ করেছিল

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জনগণকে চাপে রাখতে বাক-স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর মতো আইন পেলেও আমরা এখনও নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে সুস্পষ্ট কোনো আইন পায়নি। নিপীড়নের শিকার নারীরা আইনের আশ্রয় না পেলেও যে নিপীড়ন করছে সে আইনের প্রশ্রয় পাচ্ছে। ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী নির্যাতনকে প্রকট করে তুলছে। নিরাপত্তাবাহিনী, প্রশাসন-কারো কাছেই নিপীড়নের শিকার নুসরাত বিচার না পেয়ে বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী হওয়ায় তাকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, নির্যাতিত নারীরা যদি সঠিক সময়ে বিচার পেত তাহলে নুসরাতের মত ঘটনা আমাদের আর দেখতে হতোনা। কিন্তু আমরা নুসরাতকে দেখেছি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিপীড়নের বিচারের দাবীতে সোচ্চার থাকতে। তাই ‘নিপীড়ন বিরোধী’ এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার শ্লোগান-‘সাহসিকা নুসরাত, তুমিই যুক্তি-তুমিই প্রতিবাদ।’ নুসরাত তার সাহস ও বিচার পাওয়ার যে দৃঢ়তা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দেখিয়েছে তা সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নুসরাত তার নাম বীর হিসেবে সমাজের কাছে প্রমাণ করেছে বলে উল্লেখ করেন জনাব কিরণ।

তিনি আরও বলেন, সর্বস্তরে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা, মূল্যবোধের অভাব সর্বোপরি সমাজে সুশাসন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় নারী নিপীড়ন বাড়ছে। তনু থেকে রুপা, রুপা থেকে নুসরাত একের পর এক নৃশংস ঘটনা আমাদের সবার দায় বাড়াচ্ছে।

উদ্বোধনী প্রতিযোগিতায় ‘সামাজিক অবক্ষয় নুসরাত হত্যার অন্যতম কারণ’ শীর্ষক বিষয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের পরাজিত করে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ বিজয়ী হয়। উদ্বোধনী প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন, রানার আপ ও তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে যথাক্রমে দুই লক্ষ, এক লক্ষ ও পঞ্চাশ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন-সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক সোমা ইসলাম, সাংবাদিক পারভেজ রেজা এবং ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী।