ঢাবি ডিবেটিং সোসাইটির নির্বাচন বাধাগ্রস্তের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির (ডিইউডিএস) নির্বাচনকে বাধাগ্রস্তের অভিযোগ উঠেছে মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হোসেন শান্তর বিরুদ্ধে। শান্ত একইসঙ্গে ‘সূর্য সেন বিতর্কধারার’ বর্তমান সভাপতিও। জানা যায়, শান্তর যোগসাজশে তার কোরামের সদস্যরা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আসন্ন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। শান্তর বিতর্কের ক্যারিয়ারে আগেও এমন বিতর্কিত একাধিক ঘটনার নজির রয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তানভীর হোসেন শান্ত। তিনি জানান, ডিইউডিএসের সাধারণ সভায় নির্বাচনের বিষয়ে চিঠি দেওয়ার সাংবিধানিক নিয়মটি মানা হয়নি। এছাড়া এখন যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হয়েছে, এটাও মেনে নেওয়ার মতো না। এ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তারা নির্বাচন বর্জন করেছেন।
নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের কথা যদি কেউ বলে থাকেন, তাহলে সেটা তার ভুল ধারণা। আমাদের ডিইউডিএসের নির্বাচনটা সবসময় সাংবিধানিকভাবে হয়। -মাহবুব মাসুম, বর্তমান সভাপতি, ডিইউডিএস
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির তথ্যমতে, গত ০৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি চলে প্রার্থীতা ফর্ম বিতরণ। ভোটার ফর্ম ও প্রার্থীতা ফর্ম জমা দেওয়া যাবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মনোনয়ন প্রত্যাহারের করা যাবে ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এরপর চূড়ান্ত ভোটার ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে। ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বিতর্কের পর ১৩ ফেব্রুয়ারি চলবে ভোট গ্রহণ।
ডিইউডিএসের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি গত বৃহস্পতিবার ক্লাবটির বার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাচন কেন্দ্রিক বিভিন্ন তারিখ ঘোষণা করেন। এরপরই এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন শান্ত। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক এবং বর্তমান বিতার্কিকরা।
ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি মাহবুব মাসুম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং প্রধান মডারেটরদের সাথে পরামর্শ করে এজিএম নির্বাচন করা হয়েছে। আজ থেকে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ১৩ তারিখ নির্বাচন হবে। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন প্রধান মডারেটর। প্রতিবছরই নিয়ম মেনে ডিইউডিএসের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গত ৫ বছরে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে সেই ধারাবাহিকতায় এবারও সেটার ব্যত্যয় হবে না।
তিনি বলেন, এবারও কাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি। পক্ষপাতিত্বের কথা যদি কেউ বলে থাকেন, তাহলে সেটা তার ভুল ধারণা। আমাদের ডিইউডিএসের নির্বাচনটা সবসময় সাংবিধানিকভাবে হয়। কারো কিছু বলার থাকলে নির্বাচনের আগেই বলা উচিত ছিল। এজিএম নির্বাচনের পর এবিষয় নিয়ে কথা বলা প্রাসঙ্গিক না।
সংবিধানে ডিইউডিএসের এজিএম নির্বাচনের বিষয়টি সাত দিন আগে চিঠি দিয়ে জানানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেটা অমান্য করা হয়েছে। এ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে। -শান্ত, সভাপতি, সূর্য সেন বিতর্কধারার
ডিইউডিএসের এ নির্বাচন ছাড়াও তানভীর হোসেন শান্তর বিরুদ্ধে তার বিতর্কের ক্যারিয়ারে রয়েছে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। উচ্চ মাধ্যমিকে থাকাকালীন ডিবেটিং ক্লাব অব রউফ কলেজের (ডিসিআরসি) সভাপতি পদে বসে ঘৃণা ও প্রতিহিংসা ছড়ানো, নবীন ও প্রবীণ সদস্যের মাঝে দলগত কোন্দল ছাড়ানোর অভিযোগসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালে ক্লাবটি থেকে অবাঞ্ছিত হয়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের বিতর্ক ক্লাবের সভাপতি পদে এসেও জড়িয়েছেন নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। সভাপতি পদে থেকে তৎকালীন ক্লাবের মডারেটরসহ অন্যান্য শিক্ষকদের পথরোধ করে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ক্লাবের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বহিষ্কার, ঢাকা মেডিক্যালের সামনে ভাসমান দোকান থেকে চাঁদাবাজিসহ আরও বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপও ছড়িয়েছে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লাবের এক বিতার্কিক জানান, শান্ত গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হলে তার নিশ্চিত হার হবে জেনে বর্জনের পথ বেছে নিয়েছে। তিনি অবৈধ উপায়ে নেতৃত্বে আসতে চান। আগে যেভাবে সূর্যসেন বিতর্কধারায়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন এখন ডিইউডিএসের নেতৃত্বেও একইভাবে আসতে চাচ্ছেন।
ডিউডিএসের এ নির্বাচনে সভাপতি-সম্পাদকসহ আরও একাধিক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন তানভীর হোসেন শান্ত। এ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তিনিসহ তার কোরামের অনেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করা যায় না।
শান্তর সঙ্গে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন রোকেয়া বিতর্ক অঙ্গনের দপ্তর সম্পাদক সামিহা। তিনি বলেন, ‘‘ডিইউডিএস একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। এ সংগঠনে আমরা অগণতান্ত্রিক কোনো নির্বাচন দেখতে চাই না। ডিইউডিএসের মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচালকরা এ সংগঠনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তারা সাংবিধানিক নিয়ম-নীতি না মেনে এজিএম করেছেন। আমরা একটি সুষ্ঠু ও গণাতান্ত্রিক নির্বাচন চাচ্ছি। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি।’’
সূর্য সেন বিতর্কধারার বর্তমান সভাপতি তানভীর হোসেন শান্ত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সংবিধানে ডিইউডিএসের এজিএম নির্বাচনের বিষয়টি সাত দিন আগে চিঠি দিয়ে জানানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেটা অমান্য করা হয়েছে। এজিএম যেটা হয়েছে সেটাও মেনে নেওয়ার মত নয়। এটা অবৈধ এজিএম। আমরা সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন চেয়েছিলাম। কিন্তু এটা অনুসরণ করা হচ্ছে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে, এটাই আমার কাজ। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারছি না। আমার জানা মতে, নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে। -মাহবুবা নাসরিন, চিফ মডারেটর, ডিইউডিএস
তবে ডিউডিএসের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ডিবেটিং সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল স্যারের নির্দেশনায় গঠনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সঠিক সময়ে ডিবেটিং সোসাইটির চিফ মডারেটর এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সব হলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে।
ডিইউডিএসের চিফ মডারেটর মাহবুবা নাসরিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কথা বলতে চাচ্ছি না। এ ব্যাপারে আমার কথা বলার কোনো এখতিয়ারও নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে, এটাই আমার কাজ। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারছি না। আমার জানা মতে, নির্বাচন সঠিক সময় হবে এবং নির্বাচনের উপর কোন প্রভাব পড়বে না।