হলিক্রসের রোজারিওর প্রশ্নের উত্তর শিক্ষকরাও তাৎক্ষণিক দিতে অক্ষম
হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শোভন রোজারিও ছাত্রীদের তার কাছে কোচিং করতে বাধ্য করার জন্য পরীক্ষায় কঠিন প্রশ্ন করতেন। তার কাছে কোচিং করা ছাত্রীরাই এর উত্তর দিতে পারতো। অন্য ছাত্রী এবং শিক্ষকদেরও তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। এভাবে দু’বার ফেল করে পারপিতা ফাইহা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
পারপিতার আত্মহত্যার ঘটনায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, তার কাছে যারা পড়ত, তারা প্রশ্নের ইঙ্গিত পেত। ফলে সহজে উত্তর দিতে পারত। যারা পড়ত না তাদের ফেল করতো। এ পরিস্থিতির শিকার হয়ে পারপিতা দুই পরীক্ষায় ফেল করে। অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ডিআইএ’র পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। আটটি সুপারিশ ও ছয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে কমিটি। এ ঘটনায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)। ঢাকা বোর্ডের কমিটি পারপিতার সৎ মা ও বাবার পিটুনির শিকার হওয়ার তথ্য পেয়েছে বলে জানায়। যদিও ডিআইএ এমন তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছে।
ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন।
পারপিতার মা কামরুন নাহার জানিয়েছেন, শিক্ষক শোভন রোজারিও অভিভাবকদের ফোন করে সন্তানকে প্রাইভেট পড়তে দেওয়ার জন্য বলতেন। প্রশ্ন কঠিন করতেন যাতে তার কাছে পড়তে বাধ্য হয়। একই কথা বলেছে স্কুলের ছাত্রীরা। তারা জানিয়েছে, তিনি উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে করতেন।
আরো পড়ুন: মধ্যরাতে ‘অশোভন আচরণ’, কারণ দর্শাতে হবে রাবি ছাত্রীকে
প্রতিবেদনে বলা হয়, শোভন রোজারিও প্রাইভেট পড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন। গণিত ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষকরাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। জীববিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন বলে ছাত্রীরা জানিয়েছে। স্কুল থেকে জব্দ করা উত্তরপত্র ভিকারুননিসা নূন, মতিঝিল আইডিয়াল, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরিসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের ১২ জন শিক্ষক দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তারা বলেছেন, উচ্চতর গণিতের ওই প্রশ্নের উত্তর তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষকদেরও দেওয়া কঠিন।
আরও বলা হয়েছে, পারপিতা ফাইহা পঞ্চম শ্রেণিতে সে মেধাবৃত্তি পেয়েছিল। হলিক্রসে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হয়। তারপরও নবম শ্রেণিতে প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ১০৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৯ জনই ফেল করে। দ্বিতীয় সাময়িকে ফেল করে ৪২ জন।
প্রতিবেদনে ছয়টি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে উদাসীন শিক্ষকরা। ছাত্রী ও শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সদাসীনতা, শোভন রোজারিও প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে বেশি মনোযোগী, শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ তৈরি করা, অভিভাবকদের আলাদাভাবে উপস্থিতি অসম্মানজনক এবং নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ হয় না।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসের ব্যবস্থা, প্রশ্ন প্রণয়ন নীতিমালা অনুসরণ, প্রশ্নপত্র মডারেশন কমিটি থাকা, নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ, প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করা, পিছিয়ে পড়াদের অতিরিক্ত ক্লাস বা প্রতিষ্ঠানিক কোচিংয়ের ব্যবস্থা, কোচিং নীতিমালা বাস্তবায়ন, বিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং ব্যবস্থা জোরদার করা ইত্যাদি।